সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি: কোন ভিটামিন কোন খাবারে? জেনে নিন বিস্তারিত!

সুস্থ ও নীরোগ জীবন ধারণের জন্য ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ অপরিহার্য। খুব অল্প পরিমাণে থাকলেও এই জৈব উপাদানগুলো দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি, বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিনের অভাবে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগ। ১৯১২ সালে বিজ্ঞানী ক্যাশিমির ফ্রাঙ্ক ভিটামিন আবিষ্কার করেন এবং এরপর থেকে আমরা এর গুরুত্ব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারি। কিন্তু কোন ভিটামিন কোন খাবারে পাওয়া যায়, তা নিয়ে অনেকেই হয়তো দ্বিধায় ভোগেন। চলুন, আজ জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন ভিটামিন ও তাদের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভিটামিন এ: চোখের সুরক্ষায় অপরিহার্য
এই ভিটামিন চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সুস্থ শরীরের জন্য ভিটামিন এ-এর বিকল্প নেই।

উৎস: দুধ, ডিম, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, সজনে, পেঁপে, আম, কচু শাক, ছোট মাছ ইত্যাদি।

ভিটামিন সি: দাঁত, মাড়ি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন সি-এর ভূমিকা অনেক। এটি রক্তকণিকা তৈরি ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। এছাড়া শরীরে আয়রন শোষণে ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে, এমনকি মস্তিষ্কের কার্যক্রমকেও সচল রাখে। ভিটামিন সি বয়সজনিত বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

উৎস: আমড়া, আমলকি, পেয়ারা, আনারস, কলমি শাক, সজনে, কাঁচা মরিচ, লেবু, বাঁধাকপি ইত্যাদি।

ভিটামিন ডি: মজবুত হাড় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
এই ভিটামিন শরীরের হাড় মজবুত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

উৎস: সূর্যালোক, ডিমের কুসুম, কলিজা, সার্ডিন মাছ, দেশীয় ছোট মাছ ইত্যাদি।

ভিটামিন ই: কোষের সুরক্ষা ও রক্তকণিকার স্বাস্থ্য
ভিটামিন ই দেহকোষকে ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। লোহিত রক্ত কণিকার জন্য এই ভিটামিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উৎস: সূর্যমুখীর তেল, সয়াবিন তেল, বাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট, গম ইত্যাদি।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: শক্তির উৎস ও স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায়
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের প্রতিটি উপাদানই শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেয়।

ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন): শক্তি উৎপাদন, নার্ভ রক্ষা, ক্ষুধা বাড়ানো, হৃদরোগ প্রতিরোধ, চোখে ছানি পড়া রোধ, স্মৃতিশক্তি উন্নত করা’সহ অ্যান্টি এজিংয়ের ভূমিকা পালন করে। উৎস: ফুলকপি, লাল চাল, মটরশুঁটি, কলিজা, মাশরুম, মসুর ডাল ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-২ (রিভোফ্ল্যাবিন): শরীরে খাদ্যের কার্বোহাইড্রেটকে শক্তিতে রূপান্তর, লোহিত রক্ত কণিকা সৃষ্টি, মুখে ঘা, ঠোঁট ফাটা, অবসাদগ্রস্ততা ও খুশকি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। উৎস: পুঁইশাক, দুধ, কলিজা, বাদাম, সজনে ডাটা, ডিম, মাংস ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-৩ (নিয়াসিন): স্নায়ুতন্ত্রকে সজীব ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এমনকি খাদ্যকে শক্তিতে পরিবর্তনে সাহায্য করে। উৎস: মাংস, ফল, বাদাম, মাছ, মাশরুম, লাল চাল ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড): ত্বক, চুল, চোখ ও লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এমনকি চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট ভেঙে শক্তিতে রূপান্তর করে। উৎস: গম, মাংস, মাছ, টমেটো, ডিম, দুধ, ফুলকপি ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-৬ (পাইরিডক্সিন): মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে সজীব রাখাসহ দেহের প্রোটিনকে ভেঙে লোহিত কণিকা তৈরিতে ভূমিকা রাখে। উৎস: মাছ, গুড়, মাংস, সয়াবিন, কলা, ডিম ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-৭ (বায়োটিন): দেহে আমিষের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় সহায়তার পাশাপাশি গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তর করে। এটি চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। উৎস: পনির, দই, বরবটির বীজ, মিষ্টি আলু, গাজর, টমেটো, ডিমের কুসুম, শাক, পেঁয়াজ ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-৯ (ফলিক অ্যাসিড): মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়। এছাড়া দেহে লোহিত রক্ত কণিকা সৃষ্টি ও আমিষ জাতীয় খাদ্যকে বিপাকে সাহায্য করে। এমনকি শিশুর জন্মগত ত্রুটিও প্রতিরোধ করে। উৎস: টমেটো, বাদাম, কলা, শিম, সয়াবিন, পেঁপে, ঢেঁড়স, পালং শাক, মাছ ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-১২ (সায়ানোকোবালামিন): দেহে লোহিত রক্ত কণিকা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এছাড়া স্নায়ুকোষের কার্যক্ষমতাও বাড়ায়। উৎস: কলিজা, মাছ, মাংস, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
ভিটামিন কে: রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে
এই ভিটামিন দেহের রক্ত জমাট বাঁধা ও বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোথ্রম্বিন তৈরিতে সহায়তা করে।

উৎস: সবুজ পাতাযুক্ত শাক, সয়াবিন, ডিম, ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান
ভিটামিনের পাশাপাশি কিছু খনিজ উপাদানও আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

আয়রন বা লৌহ: রক্ত স্বল্পতা দূর করে ও রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
উৎস: মাছ, মেথি শাক, শিমের বীজ, গুড়, ডাল, বাদাম, সয়াবিন, কিসমিস, কচু, সজনে, খেজুর, ছোলা ইত্যাদি।

ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এমনকি হার্টও ভালো থাকে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে।
উৎস: পনির, দই, ডুমুর, সয়াবিন, পালং শাক, বাঁধাকপি, সজনে, দুধ, ছোলা ইত্যাদি।

পটাশিয়াম: হৃদযন্ত্র, মাংসপেশী ও স্নায়ুতন্ত্রকে কার্যকর রাখতে মূল ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এটি শরীরের জলের ভারসাম্য রক্ষাসহ দেহকোষকে সজীব রাখতে সাহায্য করে।
উৎস: ডাব, কলা, শিমের বীজ, বরই, সয়াবিন, মিষ্টি আলু, বাদাম, শাক, খেজুর, কিসমিস, গুড়, দই, মাসকালাই ইত্যাদি।

জিংক: দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ক্ষত নিরাময়ে জিংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
উৎস: চিংড়ি মাছ, ছোলা, বরবটির বীজ, ডাল, সয়াবিন, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, মাংস, ডিম, পনির, দই, মাশরুম ইত্যাদি।

আয়োডিন: শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য আয়োডিনের বিকল্প নেই। গ্রহণকৃত খাবারের হজমশক্তি বৃদ্ধি, শোষণ, সংগ্রহণ ও মল নিঃসরণে সহায়তা করে আয়োডিন। শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পুষ্টি উপাদান পৌঁছায় এটি। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড রোগ হয়।
উৎস: সামুদ্রিক মাছ, আয়োডিনযুক্ত লবণ, রূপচাঁদা মাছ, শুটকি মাছ, পোয়া মাছ, কোরাল মাছ, লইট্টা মাছ ইত্যাদি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy