মদ্যপানের পর নেশা হয়েছে? জেনেনিন এই নেশা কাটানোর উপায়

মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। কিশোর-কিশোরিদের মধ্যে এখন নেশায় জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়েছে।

নেশায় জড়িয়ে পড়া বা মাদকাসক্তি আসলে একটি ব্যাধি। সাধারণত চিকিৎসাবিদ্যায় মাদকাসক্তিকে বলা হয় ক্রনিক রিলাক্সিং ব্রেইন ডিজিজ।

মাদকাসক্তিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানসিক রোগের সাথে সম্পর্কিত হিসেবে চিহ্নিত করেছে ও এর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছে। কেননা মাদকাসক্ত ব্যক্তি মাদকের কাছে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।

মাদক গ্রহণের পর রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে তার মস্তিষ্ক সেভাবে তৈরি হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান অ্যাডিকশন সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে চিকিৎসার পর ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি এক বছরের মধ্যে আবারও মাদকদ্রব্য ব্যাবহার শুরু করেন।

মাদকাসক্তি নিরাময়ের ক্ষেত্রে অনেকেই ভরসা রাখেন পুনর্বাসন কেন্দ্র বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের উপর। তবে এই উপায়ে রাতারাতিই একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠবে না।

এজন্য ওই ব্যক্তির মনোবল ও আসক্তির সঙ্গে লড়াইয়ের মানসিকতা থাকতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন উপায়ে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজেকে মাদকমুক্ত রাখবেন-

>> মাদক ছাড়ার আগে নিজের দোষ স্বীকার করতে হবে। মাদক ব্যবহারের কারণে মানসিকভাবে মানুষ আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ মদকাসক্ত ব্যক্তিই নিজেকে নেশাগ্রস্ত হিসেবে ভাবতে পারেন না। তবে নেশামুক্ত হতে আগে নিজের এই খারাপ অভ্যাসের কথা স্বীকার করতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নিন এই অভ্যাস ছাড়ার জন্য কী কী করা উচিত আপনার।

>> যে সময় মাদক ব্যবহারের প্রবল আকাঙ্খা জাগবে ওই সময় একা থাকবেন না। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। সমাদকাসক্তরা সব সময় একা থাকতে পছন্দ করেন। যা তাদের জন্য আরও ক্ষতিকর। ব্যস্ত সময় কাটানোর মাধ্যমে মাদক থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

>> কোনো কিছুতেই কাজ না হলে একজন পেশাদারের সাহায্য নিন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে ব্যক্তিগত থেরাপি নিন ও পরিবারের সাহায্য চান। আপনার যে কোনো বিপদে কিন্তু পরিবারই পাশে থাকবে, তাই তাদের সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করে নিন।

>> বেশিরভাগ মানুষই হতাশা, বিষণ্তা কিংবা দুঃখ-কষ্টের কারণে নেশা করা শুরু করেন। তবে মাদক গ্রহণের মাধ্যমে বিষণ্নতা ও উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। তাই নেশামুক্ত থাকতে নেতিবাচক বিষয়ে চিন্তা করা বন্ধ করতে হবে।

>> বিভিন্ন কারণে মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। যেমন- মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, পরিবেশগত সমস্যা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি। এরমধ্যে আপনি ঠিক কী কারণে মাদক গ্রহণ করছেন সে বিষয়টি চিহ্নিত করুন।

>> মাদক বা অ্যালকোহল ত্যাগ করতে নিজের রুটিন পরিবর্তন করুন। যেমন- কার সঙ্গে সময় কাটাবেন কিংবা অবসরে কী করবেন, কখন-কোথায় কার সঙ্গে দেখা করবেন ইত্যাদি বিষয় নতুন করে সেট করুন।

>> মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাডভোকেট থেরেসি জে. বোরচার্ডের মতে, নেশামুক্ত হওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো ব্যায়াম। বিষণ্নতা কাটানোর সেরা উপায় শরীরচর্চা করা।

ঘাম ঝরানোর মাধ্যমে আপনি শুধু সামগ্রিক স্বাস্থ্যেরই উন্নতি ঘটাবেন না, বরং মাদকাসক্তিও কাটাতে পারবেন। এতে এন্ডোরফিন বা সুখের হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়। ফলে ভালো কাজের উদ্যোম বাড়ে। মাদকের নেশা থেকে নিজেকে বাঁচানোর দায়িত্ব আপনার নিজেকেই নিতে হবে।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy