নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী সুতপার দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটে অফিসে। ক্লায়েন্টের চাপ বেশি থাকলে নাইট শিফটও করতে হয়। অফিসের প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও মাথায় একটাই চিন্তা ঘোরে সুতপার — দেড় বছরের মেয়েকে বাড়ি ফিরে ঠিকঠাক দেখতে পাবেন তো! সারাদিন ন্যানির কাছে থাকে ছোট্ট মেয়ে। যদিও সেই ন্যানি খুবই দক্ষ এবং যথেষ্ট যত্ন করেই মেয়েকে রাখেন তিনি, তবু নিশ্চিন্ত হতে পারেন না সুতপা।
সুতপা একা নন। যে কোনও চাকরিরত এবং সদ্য মা হওয়া মেয়ের জীবনে একটা বড়ো চিন্তার বিষয় বাচ্চাকে দেখভাল করার জন্য একজন ভালো গৃহকর্মী খুঁজে পাওয়া। কপাল সুপ্রসন্ন না হলে উপযুক্ত ন্যানি পাওয়া কঠিন। কিন্তু নেহাত অসম্ভবও নয়। দরকার শুধু বিশদ হোমওয়ার্ক, নেটওয়ার্কিং এবং অনন্ত ধৈর্য। অতিরিক্ত প্রত্যাশা না রেখে খুঁজতে শুরু করলে নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন ঠিকঠাক গৃহকর্মী। শুধু খোঁজার সময় মাথায় রাখুন কয়েকটা পরামর্শ। সাফল্য আসবেই।
সুপারিশের সুফল
বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাহায্য নিন। তাঁরা যদি কাউকে সুপারিশ করেন, তা হলে সেই কর্মীকেই কাজে বহাল করুন। আপনার পরিচিত মানুষজনের যদি তাঁর কাজ পছন্দ হয়, তা হলে আশা করা যায় আপনারও পছন্দ হবে। আর সেরকম কাউকে না পেলে ভালো এজেন্সির সাহায্য নিন। পার্বতী সেনের কথাই ধরা যাক। বেশ কিছুদিন ধরেই বাচ্চাকে দেখাশোনা করার লোক খুঁজছিলেন তিনি। ‘‘আমার বোনের বাড়ি বদলে অন্য শহরে চলে যাওয়ার কথা ছিল। ওর বাচ্চাদের দেখভাল করতেন যে মহিলা, তিনি কাজ খুঁজছিলেন। ফলে আমার খুব সুবিধে হয়েছে। ভদ্রমহিলা এখন আমার কাছেই কাজ করেন। কাজের ধরনে সামান্য মানিয়ে নিতে হয়েছে, কিন্তু দিনের শেষে আমি শান্তি পেয়েছি। সবচেয়ে বড়ো কথা, এই ভদ্রমহিলাকে আমরা বিশ্বাস করতে পারি।’’
সময়ের মূল্য
খুব নীতিকথার মতো শোনালেও সঠিক ন্যানি বেছে নিতে সময়ের হিসেব করে নেওয়া জরুরি। কর্মরত মায়েদের বেলায় যেমন আট ঘণ্টার ন্যানি রাখাই যথেষ্ট। তবে যতক্ষণের জন্যই রাখুন না কেন, ন্যানির স্বাস্থ্যপরীক্ষা আর পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র দেখে নিতে ভুলবেন না। যদি মাঝে মাঝে ন্যানিকে বাড়তি সময়ের জন্য কাজ করাবেন বলে ভাবেন, তা হলে শুরুতেই পরিষ্কার করে জানিয়ে দিন। আর পুরো সময়ের জন্য ন্যানি রাখতে চাইলে মাইনের অঙ্ক ঠিক করুন ভেবেচিন্তে, কারণ খাওয়ার খরচ আর ছুটিছাটার ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে।
সম্পর্কের উষ্ণতা
অঁত্রেপ্রেনর উত্তরা বসুর ঘরে এক বছরের সন্তান। সারাটা দিন ন্যানির উপরেই ভরসা করতে হয় তাঁকে। উত্তরা জানাচ্ছেন, বাচ্চা ও ন্যানি, দু’জনেরই দু’জনকে পছন্দ করা খুব দরকার। মায়েদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, ‘‘কাউকে পাকাপাকি কাজে বহাল করার আগে একটা ছোট ট্রায়াল দিয়ে নিন। ন্যানির উপর নজর রাখার মতো বাড়িতে কেউ না থাকলে ক্যামেরাও লাগাতে পারেন। আপনি কী চাইছেন, তা নিয়ে পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলুন। এতে ওঁর কাছেও বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে।’’
হোমওয়ার্ক জরুরি
আপনার শিশুকে যাঁর ভরসায় এতক্ষণ সময় রেখে যাবেন, তাঁর অতীত সম্পর্কে যতটা সম্ভব খোঁজখবর নিন। তিনি আগে কোন বাড়িতে কাজ করেছেন, সেই বাড়ির সুপারিশ তাঁর কাছে আছে কিনা, তিনি কোথায় থাকেন, বাড়িতে কে কে আছে, এই খোঁজগুলো নিয়ে রাখতেই হবে। মনে রাখবেন, এই ভদ্রমহিলার কাছে আপনার শিশু সবচেয়ে বেশি সময় থাকবে, তাই প্রশ্ন করতে সংকোচবোধ করবেন না।
অপরাধবোধে ভুগবেন না
একজন মা আর ন্যানির তফাত অনেকটা মায়ের বুকের দুধের সঙ্গে কৌটোর দুধের তফাতের মতো। অনেক সময়ই মা পেশাগত বা শারীরিক কারণে শিশুকে কৌটোর দুধ খাওয়াতে বাধ্য হন। গৃহকর্মীর কাছে শিশুকে রাখার ব্যাপারটাও একইরকম। আপনার নিজের ভালো থাকাটাও সমান জরুরি। তাই ন্যানির কাছে শিশুকে রাখতে হচ্ছে বলে অপরাধবোধে ভুগবেন না। মনে রাখবেন, সাহায্য নেওয়ার মধ্যে দোষের কিছু নেই।