বর্তমান জীবনযাত্রায় রোগ-ব্যাধি যেন নিত্যসঙ্গী। মারণঘাতী সংক্রমণের চোখরাঙানিকে সঙ্গী করে আমাদের প্রতিদিন চলতে হচ্ছে। শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক দুর্বলতাও গ্রাস করছে অনেককে। মহামারীর ধাক্কা সামলানো সহজ কথা নয়! তার উপর, বেশিরভাগ মানুষই সারাক্ষণ শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম কারণ হতে পারে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব। আমরা খাবার গ্রহণ করলেও, তাতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি কতটা থাকে, সে বিষয়ে অনেকেই অবগত নই।
তবে সুখবর এই যে, সঠিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খাবারের মাধ্যমেই আমরা সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পাই। সঠিক খাবার শরীরে পৌঁছালে মানসিক চাপ কমে এবং শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে। তাই রোগমুক্ত থাকতে সঠিক খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যদি আপনি সারাক্ষণ দুর্বল বোধ করেন, তবে আপনার খাদ্যতালিকার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
১. সামুদ্রিক মাছ:
সামুদ্রিক মাছ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাবার। দুর্বলতা দূর করার জন্য বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ খাওয়া উচিত। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত গ্রহণ করুন। মাছের তেল মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, সামুদ্রিক মাছ খেলে তা হরমোনের ক্ষরণের মাত্রা ঠিক রাখে এবং হজমক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
২. ফার্মেন্টেড খাবার:
দুর্বলতা কাটাতে বিশেষজ্ঞরা ফার্মেন্টেড খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। ফার্মেন্টেড খাবার হলো সঠিক উপায়ে গাঁজানো খাবার। এর পাশাপাশি প্রোবায়োটিক খাবারও গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে করোনা থেকে সেরে ওঠার পর এ জাতীয় খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারগুলো রাখুন। দুপুরের খাবারের পর এক বাটি টকদই খাওয়া এক্ষেত্রে খুবই উপকারী।
৩. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত খাবার:
শরীরের অভ্যন্তরে সৃষ্ট প্রদাহ কমাতে সহায়ক খাবার গ্রহণ করা জরুরি। তাই খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত খাবার যোগ করুন। এই খাবারগুলো শরীরের প্রদাহ কমিয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। হলুদ এবং ডাবের জল নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. ফাইবারযুক্ত খাবার:
এই সময়ে ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। ফাইবার আমাদের স্নায়ুকে সতেজ করে এবং মানসিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন শাকসবজি ও শস্য জাতীয় খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। এর ফলে শরীর ভালো থাকবে এবং দুর্বলতা দূর হবে। আপনি যেকোনো কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ফিরে পাবেন।
৫. মাল্টি ভিটামিন:
আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ রাখতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টি ভিটামিনের প্রয়োজন। শরীর ঝরঝরে রাখতে এবং দুর্বলতা দূর করতে ভিটামিনের বিকল্প নেই। উদ্বেগ ও অস্থিরতা কমিয়ে সুস্থভাবে বাঁচতে চাইলে মাল্টি ভিটামিন গ্রহণ করুন। তবে যদি সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আপনি সহজেই শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেন এবং একটি সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবন ফিরে পেতে পারেন। তাই আপনার খাদ্যতালিকার দিকে আজই নজর দিন এবং এই পুষ্টিকর খাবারগুলো যোগ করুন।