কালোজিরা, ছোট কালো দানার একটি পরিচিত নাম। সৃষ্টিকর্তা এই ক্ষুদ্র বীজের মধ্যে যে বিশাল ঔষধি ক্ষমতা লুকিয়ে রেখেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। প্রাচীনকাল থেকেই কালোজিরা মানবদেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কালোজিরায় কী আছে?
কালোজিরার মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো-হাইড্রেট এবং বিভিন্ন জীবাণুনাশক উপাদান। এছাড়াও এতে ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিন, শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধের উপাদান, পাচক এনজাইম, অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
কালোজিরার কার্যকারিতা:
কালোজিরা মানবদেহের বিভিন্ন অংশে কাজ করে। এর উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলো হলো:
মস্তিষ্ক ও স্নায়ু: স্মরণশক্তি বৃদ্ধি, মাথাব্যথা ও অনিদ্রা নিরাময়, মাথা ঝিমঝিম কমানো।
চুল ও ত্বক: চুল পড়া বন্ধ করা, টাক ও দাঁদ নিরাময়, যাবতীয় চর্মরোগ, ব্রণ, আঁচিল ও কুষ্ঠের উপশম, ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা।
মুখ ও গলা: কান, দাঁত, টনসিল ও গলাব্যথার উপশম।
অভ্যন্তরীণ অঙ্গ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানো, কিডনি, মুত্র ও পিত্তপাথরির সমস্যায় উপকার, লিভার ও প্লীহার স্বাস্থ্য রক্ষা, অম্লশূল বেদনা, উদরাময়, পাকস্থলী ও মলাশয়ের সমস্যায় সহায়ক, প্রোস্টেট সমস্যায় উপকার, আলসার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
বক্ষ ও হৃদপিণ্ড: ঠান্ডা জনিত বক্ষব্যাধি নিরাময়, হৃদপিণ্ড ও রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা।
শারীরিক ও মানসিক: অবসন্নতা ও দুর্বলতা দূর করা, নিষ্ক্রিয়তা ও অলসতা কমানো, আহারে রুচি বৃদ্ধি, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি যোগানো।
কালোজিরার তেল প্রশান্তিপূর্ণ ঘুমের জন্য সহায়ক।
ওষুধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার:
কালোজিরার টিংচার, বড়ি ও তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কখনো এককভাবে, আবার কখনো অন্য ওষুধের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করা হয়। কালোজিরার তেলের সাথে জলপাই তেল, নিম তেল, রসুনের তেল ও তিল তেল মেশানো যায়। কালোজিরা আরক কমলার রসের সাথে মিশিয়েও সেবন করা যেতে পারে।
বিভিন্ন রোগের উপশমে কালোজিরার ব্যবহার:
মাথাব্যথা: কপালে, চিবুকে ও কানের পাশে কালোজিরার তেল মালিশ এবং খালি পেটে চা চামচে এক চামচ করে তেল পান। রসুনের তেল ও তিল তেলের সাথে মিশিয়ে মালিশ করাও উপকারী।
চুলপড়া: লেবুর রস দিয়ে মাথা ধুয়ে কালোজিরার তেল মালিশ করলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
কফ ও হাঁপানী: বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ।
স্মরণশক্তি ও অনুভূতি: কালোজিরার তেল ও পুদিনা সিদ্ধ (১০০ গ্রাম) ১০ দিন সেব্য।
ডায়াবেটিস: কালোজিরার চূর্ণ ও ডালিমের খোসা চূর্ণের মিশ্রণ অথবা কালোজিরার তেল উপকারী।
কিডনির পাথর ও ব্লাডার: কালোজিরা গুঁড়ো ও মধু মিশিয়ে গরম জলে পান এবং কালোজিরার টিংচার মধুসহ সেবন।
মেদ ও হৃদরোগ/ধমনী সংকোচন: চায়ের সাথে নিয়মিত কালোজিরা বা এর তেল মিশিয়ে পান।
অ্যাসিডিটি ও গ্যাসট্রিক: এক কাপ দুধে এক বড় চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার ৫-৭ দিন সেবন।
চোখের পীড়া: রাতে শোবার আগে চোখের চারপাশে ও ভুরুতে কালোজিরার তেল মালিশ এবং গাজরের রসের সাথে কালোজিরা তেল সেবন।
উচ্চরক্তচাপ: গরম পানীয় বা চায়ের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খান অথবা ভাতের সাথে কালোজিরার ভর্তা খান। রসুনের তেল সারা দেহে মালিশ করুন এবং কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন।
ডায়রিয়া: দই ও কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে ২ বার সেবন।
জ্বর: লেবুর রসের সাথে কালোজিরার তেল পান এবং কালোজিরার নস্যি গ্রহণ।
যৌন-দুর্বলতা: কালোজিরা চূর্ণ ও যয়তুনের তেল অথবা হেলেঞ্চার রস ও মধুর মিশ্রণ সেবন।
স্ত্রীরোগ, প্রসব ও ভ্রুণ সংরক্ষণ: কালোজিরা, মৌরী ও মধু দৈনিক ৪ বার সেব্য।
স্নায়ুবিক উত্তেজনা: কফির সাথে কালোজিরা সেবনে দূর হয়।
চেহারার কমনীয়তা ও সৌন্দর্যবৃদ্ধি: অলিভ অয়েল ও কালোজিরার তেল মিশিয়ে অঙ্গে মেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।
উরুসন্ধি প্রদাহ: আক্রান্ত স্থানে কালোজিরার তেল লাগান।
ছুলি/শ্বেতী: আপেল দিয়ে ঘষে কালোজিরার তেল লাগান।
আঁচিল: হেলেঞ্চা দিয়ে ঘষে কালোজিরার তেল লাগান।
পিঠ ও বাত ব্যথা: আক্রান্ত স্থানে কালোজিরার তেল মালিশ।
সাধারণ উপকারিতা:
মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছায়, ফলে চুলের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। অল্প পরিমাণে নিয়মিত কালোজিরা খেলে মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রক্ত সঞ্চালন ও বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় এবং সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে।
কালোজিরা সত্যিই এক বিস্ময়কর প্রাকৃতিক উপাদান, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে পারে।