গল্প, আড্ডা, আতিথেয়তা না থাকলে আপনি অসামাজিক হতে শুরু করবেন। ভুগতে থাকবেন একাকিত্বে। আনন্দে থাকতে চাইলে সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার, সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশতে পারার বিকল্প নেই। কিন্তু এমন যদি হয়, আপনার কথায় অন্য কেউ বিব্রত হচ্ছেন, তবে গল্প কিংবা আড্ডার চেয়ে মুখটা বন্ধ রাখাই ভালো।
কখনো কি এমন হয়েছে যে, আত্মীয়-স্বজনের বিভিন্ন প্রশ্নের ভয়ে আপনি কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেতে চাচ্ছেন না? অথবা তীর্যক কথার ভয়ে কোনো আড্ডা বা পার্টি এড়িয়ে চলছেন? দৃশ্যটি পরিচিত মনে হচ্ছে, তাই না? আপনার মুখের কিছু কথার ভয়ে কেউ একজন আপনার মুখোমুখি হতে চাইছে না, এর থেকে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে!
কারও দুর্বলতা সংক্রান্ত প্রশ্ন উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে বা সে কারণে সে নিজেকে তুচ্ছ মনে করতে পারে। যদিও আমরা বেশিরভাগই এ ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাই না, সেইসঙ্গে এটিও খেয়াল রাখতে হবে যে, অন্য কেউ যেন আমাদের দ্বারা একইভাবে আহত না হয়। যারা বুদ্ধিমান, তারা অন্যকে প্রশ্ন করার সময় ভেবেচিন্তে প্রশ্ন করে। জেনে নিন বুদ্ধিমান মানুষেরা অন্যকে কোন ৫টি প্রশ্ন করে না-
আপনি কি ওজন বাড়িয়েছেন/কমিয়েছেন?
আপনার যদি অন্যের চেহারা এবং ওজন নিয়ে কথা বলার অভ্যাস থাকে তবে এটি বাদ দেওয়া উচিত। কারণ কথা বলার জন্য আরও অনেক ভালো বিষয় রয়েছে। কে দেখতে কেমন, কার ওজন কতটুকু তা আপনার মাথাব্যথার অংশ নয়। যদি আপনি তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওজন নিয়ে কথা বলেন তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, একজন ব্যক্তির ওজন অগণিত কারণের ওপর নির্ভর করে এবং একদিনে এটি ছয় পাউন্ড পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। ডিহাইড্রেশন, অন্ত্রের কার্যকারিতার মতো আরও অনেক কারণ থাকতে পারে ওজন কম বা বেশি হওয়ার। এটি অসুস্থতা এবং হরমোনজনিত অবস্থার ওপরও নির্ভরশীল, যা মানুষকে সম্পূর্ণ অসহায় করে তোলে। কারও ওজন পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে, তার সঙ্গে আরও ভালো বিষয় নিয়ে কথা বলুন। যা তার আত্মসম্মান বোধকে বাড়াতে সাহায্য করবে।
আপনার বেতন কত?
টিকে থাকার জন্য প্রত্যেকেই কিছু না কিছু করছেন। আপনার প্রশ্নের ভেতরে কারও উপার্জন সম্পর্কে জানতে চাওয়ার বিষয়টি আনা উচিত নয়। আরেকজন কত টাকা উপার্জন করছেন, সেটি আপনার না জানলেও ক্ষতি নেই এবং জেনেও কোনো লাভ নেই। এর বদলে নিজের উপার্জন বাড়ানোর দিকে মন দিতে পারেন। আপনি যদি শুদ্ধতম উদ্দেশ্য নিয়েও জিজ্ঞাসা করতে চান, তবুও এই প্রশ্ন থেকে বিরত থাকা উচিত যে, আপনি কত টাকা উপার্জন করছেন।
বাচ্চা নেবেন কখন?
এটি একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয় যার জন্য কারো মতামত বা অনুসন্ধানের প্রয়োজন নেই। এটি একটি দম্পতির সিদ্ধান্ত এবং সম্মতি, বয়স, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং অর্থের মতো একাধিক কারণের ওপর নির্ভর করে। কোনো দম্পতিকে তাদের পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কোনো ধরনের অধিকার আপনার নেই। এই জাতীয় কোনো প্রশ্ন থেকে বিরত থাকাই ভাল।
কেন আপনি ডেটিং/বিয়ে করছেন না?
বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা এই সত্যটি স্বীকার করেন যে মানুষের বিভিন্ন সময়রেখা থাকে এবং তাদের আলাদা জীবন থাকে, যা সবসময় তাদের কাজ করার উদ্দেশ্যের সঙ্গে মেলে না। তার যদি জানাতে ইচ্ছা হয়, সে নিজে থেকেই আপনাকে জানাবে। আর না হলে অন্য কেউ কখন সম্পর্কে জড়াবেন বা কখন বিয়ে করবেন, সেই বিষয়ে আপনার জানার আগ্রহ না থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কখন সত্যিকারের চাকরি পাচ্ছেন?
কাউকে বলার জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল এবং ক্ষতিকারক জিনিসগুলোর মধ্যে একটি হলো, তারা জীবনে কতটুকু অর্জন করেছে এবং তারা যা করে তা কেবলই বিনোদন, যা তাকে খুশি রাখলেও আর্থিক কোনো মূল্য নেই। এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা অভদ্র এবং সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। আপনি যদি তাদের কর্মজীবনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন যা তার প্রতি আপনার আন্তরিক উদ্বেগ প্রকাশ করে। বলতে পারেন ‘আপনি কোন প্রকল্পে কাজ করছেন?’ বা ‘আমি আপনার কাজ সম্পর্কে আরও জানতে চাই’।