কৈশোরে জন্ম নেওয়া এক অদ্ভুত কৌতূহল কেড়ে নিল এক নবম শ্রেণির ছাত্রের প্রাণ। ‘বিষ কেমন খেতে হয়,’ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দিনের পর দিন লুকিয়ে কীটনাশক পান করে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল মুর্শিদাবাদের নিতাই বাগদি (১৫)। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
কৌতূহল থেকে মর্মান্তিক পরিণতি
জানা গেছে, মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার সুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা নিতাই বাগদি নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বিষের স্বাদ কেমন, তা জানার এক অদ্ভুত তাগিদ থেকেই সে ঘরে রাখা কীটনাশক অল্প অল্প করে লুকিয়ে পান করা শুরু করে। প্রথমদিকে শরীরে তেমন কোনো প্রভাব না পড়ায়, সে বিষ পানের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়। পরিবারের সদস্যরা এই বিষয়ে কিছুই জানতে পারেননি।
একসময় নিতাইয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে তাকে প্রথমে কান্দি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতালেই সে তার পরিবারকে জানায়, ‘বিষ কেমন খেতে আমি দেখছিলাম।’
হাসপাতালে মৃত্যু ও পরিবারের আর্তি
গত শুক্রবার নিতাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বুধবার গভীর রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃতের কাকা গৌরাঙ্গ বাগদী জানান, “পরিবারকে না জানিয়েই লুকিয়ে প্রায় প্রতিদিনই অল্প অল্প করে বিষ পান করত নিতাই বাগদী। অসুস্থ হওয়ার পর যখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন সে বলে, ‘কাকা, বিষ কেমন খেতে আমি দেখছিলাম’।”
বিশেষজ্ঞের মন্তব্য: পরিবারের উদাসীনতা?
এই ঘটনা প্রসঙ্গে মনোবিদ ডাঃ শান্তরূপ দে বলেন, “বয়স সন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কৌতূহল হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ক্ষেত্রে পরিবারের উদাসীনতাই পুরোপুরি দায়ী। যখন পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে বা বুঝতে পারে, তখন তাদের সচেতন হওয়া জরুরি ছিল।”
এই ঘটনা আবারও কিশোর বয়সে সন্তানের প্রতি অভিভাবকদের বাড়তি নজরদারি এবং তাদের কৌতূহলগুলোকে সঠিক পথে চালিত করার গুরুত্বকে তুলে ধরল।