ভোট ব্যাংক’ আতঙ্কের বলি ৬০-এর বৃদ্ধা! SIR-ই কি কাল হল? ডানকুনির ঘটনায় ফের মুখোমুখি তৃণমূল-বিজেপি

হুগলি জেলার ডানকুনি শহর ফের এক তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। সিস্টেম ফর আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড রি-ভেরিফিকেশন (SIR) প্রক্রিয়ায় নাম বাদ পড়ার আশঙ্কায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলে দাবি পরিবারের। এর ফলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার।

শনিবার সকালে ডানকুনি পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে নতুন করে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে।

‘ভয় ঢুকিয়ে দেওয়াই মোদীর লক্ষ্য’: বিস্ফোরক কুণাল ঘোষ
বৃদ্ধার মৃত্যুর পরই সরব হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। নিজের ‘এক্স’ (X) হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করে তিনি লেখেন,

“তুমি আজ হাসছো, মোদীজি? এটাই তো তোমার লক্ষ্য ছিল বাংলার সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরানো, ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া শুধু এই কারণে যে তারা বিজেপিকে ভোট দেয়নি! অমিত শাহ নিজেই বলেছেন SIR হল সেরা অস্ত্র, যার মাধ্যমে অনুগত নয় এমন ভোটারদের শনাক্ত, মুছে দেওয়া, আর দেশ থেকে তাড়ানো সম্ভব। আজ সেই বিষই কাজ করছে।”

কুণাল ঘোষের অভিযোগ, বিজেপি বাংলায় **”ভোট ব্যাংক রাজনীতি”**কে কেন্দ্র করে এক ধরণের মানসিক সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে। SIR-কে তিনি ‘প্রশাসনিক উদ্যোগ’ নয়, বরং একটি ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই আতঙ্কই একজন নিরীহ মহিলার প্রাণ কেড়ে নিল।

😭 পরিবারের দাবি: “কয়েকদিন ধরে ঘুমাতে পারছিলেন না”
মৃতার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরেই ওই বৃদ্ধা ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। SIR প্রক্রিয়ায় তাঁর নাগরিকত্ব, পরিচয় ও ঠিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এবং তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ পড়ে যাবে— এই আশঙ্কায় তিনি রাতে ঠিকমতো ঘুমোতেও পারছিলেন না। ক্রমাগত মানসিক চাপে থাকার কারণেই শনিবার সকালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

⚔️ বিজেপির পাল্টা দাবি: ‘তৃণমূলের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা’
এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের নেতাদের বক্তব্য, তৃণমূল নিজেদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকতে কেন্দ্রের উপর দোষ চাপাচ্ছে।

বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, “SIR হচ্ছে নাগরিক সুরক্ষা ও তথ্য যাচাইয়ের একটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক উদ্যোগ। কেউ যদি ভয়ে মারা যান, তার জন্য কেন্দ্রের কোনো দায় নেই। এটা তৃণমূলের বিভ্রান্তিমূলক এবং আতঙ্ক সৃষ্টিকারী প্রচারের ফল।”

⚠️ স্থানীয়দের মধ্যে গভীর আতঙ্ক
ডানকুনির স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ স্বীকার করেছেন যে এলাকায় সত্যিই এক ধরণের আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাসিন্দা বলেন, “প্রতিদিনই নতুন খবর আসছে, কার নাম বাদ পড়ছে, কাকে নোটিশ আসছে। আমাদের ঘুম নেই।” এই আবহের মধ্যেই বৃদ্ধার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে প্রশ্ন তুলেছে: SIR কি নিছকই প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নাকি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে?

🗳️ ভোটের আগে সংঘাত তুঙ্গে:
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সংবেদনশীল ইস্যুটি রাজ্য রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। তৃণমূল ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে SIR বিরোধী প্রচার শুরু করেছে। অন্যদিকে, বিজেপি দৃঢ়ভাবে বলছে, “যারা বেআইনি নাগরিকত্বের সুবিধা পেয়েছে, তারাই এখন ভয় পাচ্ছে।”

ডানকুনির এই মৃত্যু এখন বাংলার রাজনীতিতে এক ‘মানবিকতার পরীক্ষা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে— নাগরিক পরিচয় যাচাইয়ের নামে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করা কি সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত?

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy