উচ্চরক্তচাপ বা হাই প্রেসার সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই অবগত। তবে নিম্নরক্তচাপ বা লো প্রেসার নিয়ে অনেকেরই তেমন স্পষ্ট ধারণা নেই। ফলে হঠাৎ করে এই সমস্যা দেখা দিলেও অনেকে বুঝতে পারেন না যে তারা কী রোগে ভুগছেন।
হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে গেলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রথমে নিজের ব্লাডপ্রেসার মেপে দেখুন। অনেক সময় প্রেসার বাড়া ও কমার লক্ষণগুলো একই রকম হতে পারে। যদি আপনার ব্লাডপ্রেসার ৯০/৬০ বা এর নিচে থাকে, তবে ধরে নিতে হবে আপনি নিম্নরক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন।
এ বিষয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. উত্তম কুমার দাস গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, লো প্রেসারের সমস্যায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। রক্তশূন্যতা দূর করে এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত। তবে এই ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, হঠাৎ করে প্রেসার কমে গেলে তাৎক্ষণিক কী করা উচিত:
১. লবণ ও চিনির জল: লবণ রক্তচাপ বাড়াতে সহায়ক, কারণ এতে সোডিয়াম থাকে। তবে সরাসরি বেশি লবণ মেশানো জল পান না করাই ভালো। সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো, এক গ্লাস জলে দুই চা চামচ চিনি এবং এক থেকে দুই চা চামচ লবণ মিশিয়ে খাওয়া। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের চিনি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
২. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: হঠাৎ করে লো প্রেসার দেখা দিলে এক কাপ কফি পান করতে পারেন। স্ট্রং কফি, হট চকলেট বা যেকোনো ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় দ্রুত ব্লাডপ্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে। যারা দীর্ঘ দিন ধরে এই সমস্যায় ভুগছেন, তারা সকালে ভারী নাস্তার পর এক কাপ কফি পান করতে পারেন।
৩. বিটের রস: বিটের রস উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ উভয়ের জন্যই সমান উপকারী। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত এক সপ্তাহ বিটের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৪. বাদাম: লো প্রেসার হলে পাঁচটি কাঠবাদাম এবং ১৫ থেকে ২০টি চিনাবাদাম খেতে পারেন। এটি রক্তচাপ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৫. পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতায় ভিটামিন ‘সি’, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও প্যান্টোথেনিক অ্যাসিডের মতো উপাদান থাকে, যা দ্রুত ব্লাডপ্রেসার বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিক অবসাদও দূর করতে সাহায্য করে। এর পাতা বেটে নিয়ে মধুর সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন।
৬. যষ্টিমধু: আদিকাল থেকেই যষ্টিমধু বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক কাপ জলে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু মিশিয়ে ২-৩ ঘণ্টা রেখে দিন, তারপর পান করুন। এছাড়াও, দুধে মধু মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
৭. খাবার স্যালাইন: শরীরে জলশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণে নিম্নরক্তচাপ হলে শুধু খাবার স্যালাইন মুখে খেলেই প্রেসার দ্রুত বেড়ে যায়। লো ব্লাড প্রেসারে খাবার স্যালাইন সবচেয়ে উপযোগী এবং তাৎক্ষণিক ফলদায়ক।
তবে মনে রাখবেন, এগুলো ঘরোয়া প্রাথমিক চিকিৎসা। নিয়মিত নিম্নরক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।