আর নয় আকস্মিক ধাক্কা! ১০ বছর আগেই জানা যাবে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি

হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী হৃদরোগ ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, তা ১০ বছর আগেই নির্ণয় করা সম্ভব! এমনই এক যুগান্তকারী তথ্য সামনে এনেছেন স্কটল্যান্ডের ডান্ডি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। তাদের দাবি, একটি সাধারণ এমআরআই (MRI) স্ক্যানের মাধ্যমেই আগাম বার্তা পাওয়া যাবে কার হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি এবং কার কম।

‘TASCFORCE’ প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ৫০১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী। তাদের মধ্যে ১৫২৮ জনের হৃদয়ের এমআরআই স্ক্যান করা হয়। ১০ বছর পর সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই অভূতপূর্ব সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদয়ের বাঁ দিকের নীচের প্রকোষ্ঠ বা ‘লেফট ভেন্ট্রিকুলার’ যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বড় আকার ধারণ করে, তাহলে আপাতদৃষ্টিতে হৃদয় সুস্থ থাকলেও ভবিষ্যতে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রবল।

এই গবেষণাটি ‘Radiology’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটিকে সমর্থন জানিয়েছে চেস্ট, হার্ট অ্যান্ড স্ট্রোক স্কটল্যান্ড (CHSS)। প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. অশ্বিনী মেহতা এই আবিষ্কারকে ‘গেম চেঞ্জার’ বা খেলার নিয়ামক পরিবর্তনকারী বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এই প্রযুক্তি কেবল উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতেই সাহায্য করবে না, বরং এমন অনেক জীবন বাঁচাতে পারবে যাদের এখনো কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি।”

পুরুষ ও নারীদের ঝুঁকির ভিন্ন ভিন্ন কারণ:

এই গবেষণার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি পুরুষ ও মহিলাদের হৃদরোগের ঝুঁকির আলাদা কারণও চিহ্নিত করতে পেরেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেশার (নিম্ন রক্তচাপ) স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি থাকলেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে, মহিলাদের ক্ষেত্রে বাড়তি কোলেস্টেরল হৃদরোগের প্রধান কারণ হতে পারে—এমনকি যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা চিকিৎসার প্রয়োজন না পড়ে এমন স্তরেও থাকে।

প্রতিরোধে এক নতুন দিগন্ত:

গবেষক দলের প্রধান, ডান্ডি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জিল বেল্চ এই আবিষ্কার সম্পর্কে আশাবাদী। তিনি বলেন, “এই গবেষণা আমাদের সেই মানুষদেরও শনাক্ত করতে সাহায্য করেছে, যাদের হৃদরোগের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি নেই, কিন্তু আগামী বছরগুলোতে হতে পারে। আগেভাগেই চিকিৎসা শুরু করলে সেই সম্ভাব্য ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।”

চিকিৎসকদের মতে, এই প্রযুক্তি প্রচলিত অ্যাঞ্জিওগ্রাফি বা অন্যান্য ব্যয়বহুল এবং জটিল পরীক্ষা ছাড়াই বহু মূল্যবান প্রাণ বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে। যদি এই পদ্ধতি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উপর সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে লক্ষ লক্ষ হৃদরোগের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এই গবেষণা হৃদরোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা আগামী দিনে স্বাস্থ্যখাতে এক বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy