রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে আবারও বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। ১৪০টি জনজাতিকে নিয়ে রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। এই রায় রাজ্য সরকারের ওবিসি সংরক্ষণ নীতিকে ফের একবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
আদালতের কঠোর পর্যবেক্ষণ: নির্দেশ অমান্যের অভিযোগ
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই মামলায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের ৪-৫টি বিজ্ঞপ্তিতে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। রাজ্যের বিজ্ঞপ্তিতে সরাসরি আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।” বিচারপতি মান্থা রাজ্যের উদ্দেশে আরও প্রশ্ন তোলেন, “কেন ২০১২ সালের আইনে সংশোধনী আনলেন না? আপনারা ২০১২ সালের ওবিসি আইন অনুযায়ী অর্ধেক কাজ করেছেন। তারপর আবার ১৯৯৩ সালের আইনে ফেরত গেছেন, এটা কেন?”
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীও রাজ্যের উদ্দেশ্যে বলেন, “আগেও বলেছি যে ওবিসি শ্রেণীভুক্ত ৬৬টি সম্প্রদায়কে নিয়ে পদক্ষেপ করুন। আপনারাও বলেছেন যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষা করছেন। আমরাও বলেছি যে ঠিক আছে, তাহলে সেই অবধি কোনও পদক্ষেপ করবেন না।” আদালতের এই মন্তব্যগুলি রাজ্যের ওবিসি নীতি প্রণয়নে ধারাবাহিক ত্রুটির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নওশাদ সিদ্দিকীর ক্ষোভ ও আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
হাইকোর্টের এই রায়ের পর বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। তিনি অভিযোগ করেন, “বিধানসভায় বিরোধীদের বলতে দেওয়া হয়নি। এরকম কোনও পজিশন দেওয়া হয়নি বিরোধীদের মতামত রাখার।” তাঁর মতে, ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার ছিল।
নওশাদ বলেন, “কমিশন ভুল করেছে, এই ভুলটা শুধরাতে হবে। যদি না শুধরায় তখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তাঁর এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, রাজ্য সরকার যদি আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের ত্রুটি সংশোধন না করে, তবে বিরোধীরা আরও কঠোর আইনি পথে হাঁটতে প্রস্তুত।
প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা
রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি রায়ের পর এই বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে, যেখানে ২০০৯ সালের পর থেকে তৈরি হওয়া ওবিসি তালিকা বাতিল করা হয়েছিল। এরপর রাজ্য সরকার ১৪০টি নতুন জনজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, সেটিতেও হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ায়, ওবিসি সংরক্ষণের ভবিষ্যৎ আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
এই রায়ের পর রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নেয় এবং রাজনৈতিক মহলে এর কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে, আদালতের কঠোর পর্যবেক্ষণ এবং বিরোধীদের আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এই ইস্যুটি আগামী দিনে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে।