বালুরঘাট কলেজে বিক্ষোভ, প্রথম সেমিস্টারের ‘ব্যাক’ কাটাতে না পেরে চতুর্থ সেমের পড়ুয়ারা বসলো ধরনায়

বালুরঘাট কলেজে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হলো মঙ্গলবার। চতুর্থ সেমিস্টারে পৌঁছেও প্রথম সেমিস্টারের আটকে থাকা (ব্যাক) পেপারে পাশ করতে না পেরে ব্যাপক ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ছাত্রছাত্রীরা। বারবার পরীক্ষা দিয়েও একই নম্বর আসায় এবং কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে কোনো কাজ না হওয়ায়, অবশেষে কলেজের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভে নামলেন অকৃতকার্য পড়ুয়ারা।

অকৃতকার্যদের ক্ষোভ: নম্বর বিভ্রাট না অন্য কিছু?
ঘটনার সূত্রপাত বালুরঘাট কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর প্রথম সেমিস্টারের একটি নির্দিষ্ট পেপারে অকৃতকার্য হওয়াকে কেন্দ্র করে। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, তারা প্রথম সেমিস্টারের ওই বিষয়ে ‘ব্যাক’ পাওয়ার পর পুনরায় পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, তাদের প্রাপ্ত নম্বর বিন্দুমাত্র বাড়েনি, যা ছিল তাই আছে। শুধু তাই নয়, নম্বর বাড়ানোর আশায় রিভিউ (পুনর্মূল্যায়ন) করার পরও একই নম্বরই বহাল রয়েছে।

চতুর্থ সেমিস্টারের একজন ছাত্রী, রাজশ্রী সাহা, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের প্রাপ্য নম্বর দিতে হবে। আমরা পরীক্ষা দিয়েছি, কোনো নম্বর বাড়েনি। আবার পরীক্ষা দিয়েছি, একই নম্বর এসেছে। বারবার কীভাবে একই নম্বর আসতে পারে?” তাদের দাবি, এটি নিছকই নম্বর বিভ্রাট নয়, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।

কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও ছাত্রছাত্রীদের আল্টিমেটাম
এই অদ্ভুত নম্বর বিভ্রাট নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে বালুরঘাট কলেজের অধ্যক্ষকে জানান। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সুরাহা না মেলায়, তারা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন জানান। এতকিছুর পরও যখন সমস্যার সমাধান হলো না, তখন ধৈর্য হারিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বালুরঘাট কলেজের সামনে বিক্ষোভে নামেন অকৃতকার্য পড়ুয়ারা।

বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাদের মূল দাবি, যারা পাশ করতে পারেননি, তাদের অনতিবিলম্বে পাশ করিয়ে দেওয়া হোক।

অধ্যক্ষের অসহায়তা: দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁধে?
এই বিষয়ে বালুরঘাট কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ পঙ্কজ কুণ্ডু জানান, “পরীক্ষার প্রক্রিয়া ও খাতা দেখার সম্পূর্ণ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হয়। তাই এই বিষয়ে কলেজের সরাসরি তেমন কিছু করার নেই।” তার এই মন্তব্যে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে, কারণ তারা মনে করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্যার দায় এড়াচ্ছে।

ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এই ঘটনা বালুরঘাট জুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, এখন সেটাই দেখার। আদৌ কি এই পড়ুয়ারা তাদের ‘প্রাপ্য নম্বর’ ফিরে পাবেন, নাকি তাদের শিক্ষাজীবন একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোবে?

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy