নিয়ম ভাঙছে ইসকন? পুরীর গজপতি মহারাজের কড়া চিঠি, বইছে অসন্তোষের ঝড়!

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত রথযাত্রা উৎসবের দিনক্ষণ নিয়ে এবার বড়সড় বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। পুরীর ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ মন্দিরের গজপতি মহারাজ দিব্যসিংহ দেব ইসকন (ISKCON)-কে চিঠি দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিদেশে রথযাত্রা পালনের সময় যেন শাস্ত্রীয় বিধি বা তিথি লঙ্ঘন না হয়। তাঁর অভিযোগ, ইসকন পরিচালিত কিছু মন্দিরে স্নানযাত্রা ও রথযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠানগুলি নির্দিষ্ট দিনের বাইরে ভিন্ন তারিখে পালন করা হচ্ছে, যা পুরীর ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে ‘ধর্মীয় বিধি লঙ্ঘন’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পিটিআই সংবাদসংস্থায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, গজপতি মহারাজ দিব্যসিংহ দেব তাঁর চিঠিতে ইসকনকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ইসকন পরিচালিত কিছু মন্দিরে স্নানযাত্রা বা রথযাত্রার মতো অনুষ্ঠানগুলি অন্য তারিখে পালন করা হচ্ছে। বিশেষ করে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা অনুষ্ঠান নির্দিষ্ট দিন ছাড়া অন্যান্য দিনে পালন করা হয়েছে। এমনকি রথযাত্রা পালনের দিনও বদল করা হচ্ছে। ইসকনের এই পদক্ষেপে গজপতি মহারাজ স্পষ্টতই অসন্তুষ্ট। তাঁর অভিযোগ, এই ধরনের প্রথা নির্দিষ্ট দিনে পালিত হয় এবং সেটা অন্যদিনে করা ধর্মীয় বিধি লঙ্ঘন।

এই চিঠিটি মায়াপুরের ইসকন গভর্নিং বডি কমিশনের চেয়ারম্যান শ্রী গোবর্ধন দাস প্রভু-কে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে, পৃথিবীর কোথাও কোনও ইসকন মন্দির বা ইসকনের কোনও কেন্দ্র যাতে শাস্ত্র ও ঐতিহ্য লঙ্ঘন না করে। শাস্ত্র অনুমোদিত নয় এমন তিথিতে যেন জগন্নাথের স্নানযাত্রা বা রথযাত্রা পালন না করা হয়।

গজপতি মহারাজের চিঠিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের বাইরে ইসকন দ্বারা চালিত কিছু মন্দির পবিত্র ধর্মগ্রন্থে অনুমোদিত নয় এমন তারিখ বা তিথিতে স্নানযাত্রা বা রথযাত্রা উদযাপন করছে। চিঠিতে কয়েকটি পোস্টের নথিও শেয়ার করা হয়েছে, যেখানে নিউ ইয়র্ক সিটি, ক্যালগারি এবং লিসেস্টারের ইসকন মন্দিরগুলিতে এই ধরনের ‘তিথি-বিচ্যুতি’ ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে।

পুরীর শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনের বিদ্বান পণ্ডিতরা ২০ মার্চ ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত সভায় ইসকন পণ্ডিতদের উত্থাপিত মতামতগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করেছেন। এর পরই পণ্ডিতরা পুনরায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন:

স্নানযাত্রা শুধুমাত্র জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা তিথিতে (এই বছর ১১ জুন) পালিত হবে।
রথযাত্রা কেবলমাত্র আষাঢ় শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে (এই বছর ২৭ জুন) শুরু হয়ে আষাঢ় শুক্লপক্ষ দশমী তিথি (এই বছর ৫ জুলাই) পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
অন্য কোনও তিথিতে এই বিধি পালন করা মানে স্পষ্ট নিয়ম লঙ্ঘন, এমনটাই মত পুরীর পণ্ডিতদের।

গজপতি মহারাজের এই চিঠির প্রেক্ষিতে কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস সংবাদ মাধ্যমকেতাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রায় ১৫০টি দেশে, ৪ হাজারেরও বেশি শহর ও গ্রামে আমরা রথযাত্রা পালন করি। বিদেশে সাধারণত একই দিনে রথযাত্রা পালন করা সম্ভব হয় না। কারণ বহু দেশে আবহাওয়া অনুকূল থাকে না।”

তিনি অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, “অস্ট্রেলিয়াতে জুন-জুলাই মাসে বরফ পড়ে। ফলে ওই সময়ে আমরা সেখানে উৎসব পালনের অনুমতি পাই না। তাই অন্য দিন তা পালন করতে হয়।”

রাধারমন দাস আরও বলেন, “গজপতি মহারাজ যা বলেছেন, তা বাস্তবে কতটা সম্ভব, সেটা ভাবনাচিন্তা করার বিষয়। সেক্ষেত্রে দুটোই রাস্তা: এক, নিয়ম লঙ্ঘন না করে একই দিনে রথযাত্রা পালন করা; অথবা অনুমতি না পেলে উৎসব বন্ধ করে দেওয়া। সেটা তো সম্ভব নয়। অনেক দেশই ছুটির দিন উৎসব পালনের কথা বলে, সেক্ষেত্রে আমাদের দিনক্ষণ এদিক-ওদিক হয়েই যায়। নিয়ম পালন করতে গেলে রথযাত্রাই হবে না।”

এই পরিস্থিতিতে রথযাত্রা পালনের ঐতিহ্যগত দিনক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এর বাস্তবায়ন—এই দুইয়ের মধ্যে একটি নতুন সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কীভাবে এই সমস্যার সমাধান হয় এবং বিশ্বজুড়ে রথযাত্রা উৎসবের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy