বিশ্বজুড়ে এখন ডায়াবেটিসের বাড়বাড়ন্ত। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে দেশে প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এমনকি সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে ৭৩ শতাংশ ডায়াবেটিকের সংখ্যা বাড়বে। শুধু তাই নয়, মধুমেহ রোগে মৃত্যুর গ্রাফও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তাই আপনি যদি প্রি-ডায়াবেটিক হন, তাহলেও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
প্রি-ডায়াবেটিস হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কিন্তু টাইপ ২ ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার মতো বেশি নয়। তবে এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ার মতো একটি সতর্কতামূলক লক্ষণ বটে। বেশিরভাগ সময়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে প্রি-ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সঙ্গে আয়ুর্বেদ মতে, নিয়মিত তিনটি পানীয়তে চুমুক দিলেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তে শর্করার পরিমাণ।
১. করলার রস: রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক ঔষধ
করলার রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি ঔষধ হিসেবে বিবেচিত হয়। তেতো স্বাদের এই সবজিতে চ্যারান্টিন এবং মোমরডিসিন নামক যৌগ রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদদের মতে, টানা ৩০ দিন সকালে খালি পেটে করলার রস খেলে ডায়াবেটিস বশে থাকে। চাইলে তেতো স্বাদ কমাতে এতে টমেটোর রসও যোগ করতে পারেন।
২. স্ট্রিং বিনস টি: অগ্ন্যাশয়ের স্বাস্থ্যের সহায়ক
স্ট্রিং বিনস বা ফ্রেঞ্চ বিনস দিয়ে তৈরি চা শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই কার্যকর। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা আপনার অগ্ন্যাশয়ের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।
প্রস্তুত প্রণালী: পাঁচটি স্ট্রিং বিনসকে লম্বালম্বি দশ টুকরো করে কেটে দেড় কাপ জলে ফোটান। এক কাপ হওয়া পর্যন্ত ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। সকালে খালি পেটে অথবা বিকেলে এই পানীয় পান করলে উপকার পাবেন।
৩. মেথি বীজ: কোলেস্টেরল ও খিদে নিয়ন্ত্রণে
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের তৃতীয় উপায় হলো মেথির জল পান করা। এটি দ্রবণীয় ফাইবারের খুব ভালো উৎস। সঙ্গে কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত মেথি জল পান করলে বারে বারে খিদে পাওয়ার প্রবণতাও কমে।
প্রস্তুত প্রণালী: এক চা চামচ মেথি বীজ এক কাপ জলে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন এবং সকালে খালি পেটে এই পানীয় পান করুন। সঙ্গে চাইলে দারুচিনি গুঁড়ো, ব্ল্যাকবেরি গুঁড়ো এবং গোলমরিচও যোগ করতে পারেন। এই তিনটি উপাদানই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে এবং হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য থাকায় রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং এই আয়ুর্বেদিক পানীয়গুলোর নিয়মিত সেবন প্রি-ডায়াবেটিসকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে রূপান্তরিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তবে যেকোনো নতুন পদ্ধতি শুরু করার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।