জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আলোচিত মুখ এবং ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে রাজধানী ঢাকা। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী শাহবাগের রাস্তায় নেমে ভারত ও আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগানে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা ও আধাসেনা নামানো হলেও উত্তেজনার পারদ নামছে না।
সংবাদমাধ্যম ও দূতাবাসে ভয়াবহ তাণ্ডব
বিক্ষোভের আঁচ সবচেয়ে বেশি পড়েছে বাংলাদেশের প্রথম সারির দুই সংবাদমাধ্যম— ‘প্রথম আলো’ এবং ‘ডেইলি স্টার’-এর ওপর। হাদির নিরাপত্তায় রাষ্ট্রের ব্যর্থতা এবং সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার প্রতিবাদে দুই অফিসের ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা। ভেতরে বহু সংবাদকর্মী আটকে পড়লে শেষ পর্যন্ত সেনা হস্তক্ষেপে তাদের উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, সেনা ও আধাসেনা মোতায়েন থাকলেও তারা বিক্ষোভকারীদের হটাতে কোনো কড়া পদক্ষেপ নেয়নি।
অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও। সেখানে ভারতীয় দূতাবাসে পাথর ছোড়া এবং ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ খুলসি এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা ভারত ও আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। এর পাশাপাশি রাজশাহীতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন এবং আওয়ামী লীগের অফিসেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
ইউনূস সরকারের প্রতিক্রিয়া: ‘জাতীয় শোক’ ও ‘শহিদ’ ঘোষণা
দেশের এই টালমাটাল অবস্থায় মুখ খুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে তিনি শুক্রবার ‘জাতীয় শোক’ ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে দেশের সমস্ত মসজিদে হাদির স্মরণে বিশেষ প্রার্থনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাদিকে ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “পরাজিত ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসবাদী শক্তির শত্রু ছিলেন হাদি। যারা তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চেয়েছে, তাদের ছাড়া হবে না।” তিনি এই ঘটনাকে ‘নৃশংস হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত করে দোষীদের কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে প্রধান উপদেষ্টার এই বার্তার পরও ঢাকার রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে।
কেন হাদিকে নিয়ে এত উন্মাদনা?
জুলাই আন্দোলনের সময় থেকেই লাইমলাইটে আসেন শরিফ ওসমান হাদি। তিনি মূলত পরিচিত ছিলেন তাঁর কট্টর ভারত-বিরোধী এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থানের জন্য। এমনকি তিনি বিএনপি-র পুরনো ঘরানার রাজনীতিরও কড়া সমালোচক ছিলেন। তাঁর অনুগামীদের দাবি, হাদিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগরে এক বিক্ষোভ কর্মসূচীর সময় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন তিনি। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিঙ্গাপুরে এয়ারলিফ্ট করা হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেখানেই তাঁর জীবনাবসান হয়। এই মৃত্যুর খবর দেশে পৌঁছানো মাত্রই শুরু হয় নজিরবিহীন এই তাণ্ডব।