দীর্ঘ ১০ মাসের লুকোচুরি আর পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার পালা শেষ। অবশেষে গুজরাটের কুখ্যাত নেটপ্রভাবী কীর্তি প্যাটেলকে গ্রেপ্তার করল আহমেদাবাদ পুলিশ। সুরাটের এক বিত্তশালী ইমারত ব্যবসায়ীকে যৌনতার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগে অভিযুক্ত কীর্তির গ্রেফতারি সাইবার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের এক নতুন মাত্রা উন্মোচন করল। বুধবার আহমেদাবাদের সরখেজ এলাকা থেকে প্রযুক্তির সাহায্যে তাকে জালে তোলে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কীর্তি প্যাটেল অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তার ‘প্রভাব’ খাটিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে যৌনতার ফাঁদে ফেলেন। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইলের চক্র। মানহানির ভয় এবং সামাজিক প্রতিপত্তি নষ্ট করার হুমকির মুখে পড়ে ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে বিপুল অঙ্কের অর্থ তুলে দিতে বাধ্য হন। এই ঘটনার গভীরতা আরও স্পষ্ট হয় যখন তদন্তে উঠে আসে যে, এই ব্ল্যাকমেইলিং চক্রে মোট পাঁচজন জড়িত ছিল, যাদের মধ্যে চারজনকে আগেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছিল। কীর্তি প্যাটেল ছিলেন এই চক্রের মূল হোতা, যিনি এতদিন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।
২০২৩ সালের জুন মাসে সুরাট আদালত কীর্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সেই সময় থেকেই তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে বিভিন্ন শহরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পুলিশের সূত্র বলছে, তাকে ট্র্যাক করা ছিল এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। কীর্তি ক্রমাগত তার মোবাইল সিম কার্ড বদল করতেন, যা তাকে খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছিল। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি এবং সুরাটের পুলিশ ও আহমেদাবাদ পুলিশের যৌথ তৎপরতার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো এই নেটপ্রভাবীকে।
আহমেদাবাদের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অলোক কুমার এই গ্রেফতারি সম্পর্কে বলেন, “গত ১০ মাস ধরে আমাদের দল কীর্তির খোঁজে দিনরাত এক করে কাজ করছিল। সাইবার প্রযুক্তির সহায়তায় ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া গোপন তথ্য কাজে লাগিয়েই আমরা শেষ পর্যন্ত তাকে পাকড়াও করতে পেরেছি।” তার এই মন্তব্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধীদের কীভাবে ট্র্যাক করা হচ্ছে, তার একটি ইঙ্গিত দেয়।
কীর্তি প্যাটেলের গ্রেফতারি শুধু একটি অপরাধের নিষ্পত্তির ইঙ্গিত দেয় না, বরং অনলাইন প্রভাবশালীদের দায়িত্বহীন আচরণ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেড়ে চলা অপরাধমূলক প্রবণতা নিয়ে সমাজের বিশিষ্ট মহলে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে যাদের লাখ লাখ ফলোয়ার রয়েছে, তাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং নৈতিকতা কতটা প্রভাব ফেলছে সাধারণ মানুষের উপর, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনা ডিজিটাল যুগে সম্পর্কের জটিলতা এবং অপরাধের নতুন ধরন নিয়ে ভাবার অবকাশ তৈরি করেছে। পুলিশ এই ঘটনায় আরও বিস্তারিত তদন্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং কীর্তি প্যাটেলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে।