ভারতীয় সমাজ লিভ-ইন সম্পর্ককে এখনও বাঁকা চোখে দেখলেও, আইনের চোখে তা মোটেও অপরাধ নয়। এক ঐতিহাসিক রায়ে এমনটাই জানাল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। বিচারপতি বিবেক কুমার সিং স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়েও যদি একসঙ্গে থাকতে চান, তবে রাষ্ট্র বা পরিবার সেখানে বাধা দিতে পারে না।
ঘটনার প্রেক্ষাপট: নিজেদের পরিবারের হুমকি এবং পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ নিয়ে ১২টি লিভ-ইন দম্পতি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতেই এই সুরক্ষা প্রদানের নির্দেশ দেয় আদালত।
রায়ের মূল ৪টি উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট:
পছন্দের স্বাধীনতা: বিচারপতি জানান, সাবালক হওয়ার পর একজন মানুষ কার সঙ্গে থাকবেন এবং কোথায় থাকবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা তাঁর রয়েছে। এটি ভারতের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার।
সামাজিক বনাম ব্যক্তিগত নৈতিকতা: আদালত স্বীকার করেছে যে সমাজের একাংশ লিভ-ইন সম্পর্ক নিয়ে অস্বস্তি বোধ করতে পারে। কিন্তু বিচারপতির সাফ কথা— “সামাজিক নৈতিকতা এবং আইনের বিচার আলাদা। আইনত এই সম্পর্ক নিষিদ্ধ নয়।”
জীবনের অধিকার সবার উপরে: নাগরিক বিবাহিত হন বা অবিবাহিত, নাবালক হন বা সাবালক— প্রাণের সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষা করা রাষ্ট্রের বাধ্যতামূলক কর্তব্য।
পুলিশি গাফিলতিতে কড়া বার্তা: সুরক্ষা চেয়েও পুলিশের সাহায্য না পাওয়ায় দম্পতিদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিচার করে পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশিকা জারি করেছে হাইকোর্ট।
পুরনো ধ্যানধারণায় বদল
এর আগে বিভিন্ন সময়ে কিছু হাইকোর্ট লিভ-ইন দম্পতিদের সুরক্ষা দিতে অস্বীকার করেছিল। কিন্তু বিচারপতি বিবেক কুমার সিং সেই পুরনো দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি জানান, যেহেতু এই দম্পতিরা প্রাপ্তবয়স্ক এবং কোনও অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত নন, তাই তাঁদের নিরাপত্তা না দেওয়ার কোনও আইনি ভিত্তি নেই।