সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুলাই অভ্যুত্থানের আলোচিত নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির প্রয়াণে কার্যত থমথমে বাংলাদেশ। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া চরম উত্তেজনা ও সহিংসতার মাঝে জাতির উদ্দেশে জরুরি ভাষণ দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একদিকে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আর্জি, অন্যদিকে হাদিকে ‘শহিদ’ ঘোষণা করে বড়সড় কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তিনি।
“কাউকেই ছাড়া হবে না”: হুঙ্কার ইউনূসের
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস হাদির মৃত্যুকে একটি ‘নৃশংস হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “হাদি ছিলেন ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসী শক্তির প্রধান শত্রু। যারা তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ করে বিপ্লবীদের মনে ভয় ঢোকাতে চেয়েছে, তাদের আমরা আবারও পরাজিত করব। এই খুনের সঙ্গে জড়িত একজনকেও রেহাই দেওয়া হবে না।” প্রধান উপদেষ্টা হাদির ত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ঘোষণা করেন যে, আজ শুক্রবার গোটা বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে এবং দেশের প্রতিটি মসজিদে তাঁর আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হবে।
রণক্ষেত্র বাংলাদেশ: জ্বলছে মিডিয়া অফিস, ভাঙচুর মুজিবুরের বাড়িতে
হাদির মৃত্যুসংবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তেই ঢাকায় শুরু হয় তাণ্ডব। হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করে। পরিস্থিতির অবনতি এতটাই ঘটে যে:
-
মিডিয়া অফিসে হামলা: বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ এবং ‘ডেইলি স্টার’-এর অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
-
রাজশাহীতে অগ্নিসংযোগ: রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনেও হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।
-
ভারত-বিরোধী স্লোগান: ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা তীব্র ভারত-বিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে।
সিংগাপুরে শেষ লড়াই
গত সপ্তাহে ঢাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ওসমান হাদি। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে তাঁকে দ্রুত সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা কয়েকদিন যমে-মানুষে লড়াই করার পর বৃহস্পতিবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই তরুণ নেতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা সামাল দেওয়া ইউনূস প্রশাসনের কাছে এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতও এই পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে।