ডায়াবেটিসে অন্ধত্বের ঝুঁকি! চোখের সুরক্ষায় জরুরি এই ৩টি কাজ

বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার এই সমস্যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজেস-এর এক মার্কিন সমীক্ষা অনুসারে, ডায়াবেটিস চোখের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, যা ঝাপসা দৃষ্টি থেকে একসময় অন্ধত্বের কারণ পর্যন্ত গড়াতে পারে।

এই কারণে ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকেই রোগীর চোখের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। নিয়মিত চোখের পরিচর্যা অন্ধত্বের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। ডায়াবেটিসের কারণে চোখে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামক একটি রোগ হতে পারে। সময়মতো এই রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা করা না হলে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মারাত্মক বিপদ অপেক্ষা করে।

বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন নিয়মিত চোখ স্ক্রিনিং করানোর উপর। কারণ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে চোখের লেন্স শরীরের অন্যান্য টিস্যুর মতোই অতিরিক্ত তরল টেনে নেয়, যা চোখের ফোকাস করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।

তাদের মতে, ডায়াবেটিসের কারণে রেটিনায় নতুন রক্তনালি তৈরি হতে পারে। যদি এই নতুন রক্তনালিগুলো চোখের স্বাভাবিক তরল প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে চোখের অভ্যন্তরে চাপ বেড়ে গ্লুকোমার কারণে অপটিক নার্ভের ক্ষতি হতে পারে। এর মূল কারণ হলো রক্তে অত্যধিক চিনি ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রেটিনার রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

কিছু উপসর্গ, যেমন চোখের সামনে ভাসমান কালো দাগ দেখা যাওয়া অথবা অন্ধকারে কোনো রং ভেসে ওঠা, মোটেও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এগুলো ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসা ছাড়া এই পরিবর্তনগুলো চলতে থাকলে রোগীর স্থায়ী অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

মার্কিন সমীক্ষা অনুসারে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং চোখকে সুস্থ রাখার সবচেয়ে কার্যকর তিনটি উপায় হলো:

১. নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরিমাপ করা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা চোখের ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা অপরিহার্য।

২. ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি বাড়ায়। তাই চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধূমপান ত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরি।

৩. বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানো: ডায়াবেটিস রোগীদের বছরে অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা গেলে অন্ধত্বের ঝুঁকি কমানো যায়।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে চোখের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য। এই তিনটি সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করে আপনি আপনার মূল্যবান দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করতে পারেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy