আমাদের দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা চোখ, স্নায়ু, হার্ট এবং কিডনিসহ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এখন এই রোগের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন, তবে অনেকের ক্ষেত্রেই কোনো স্পষ্ট উপসর্গ দেখা যায় না, ফলে ডায়াবেটিস সনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ক্ষুধা, ঘন ঘন প্রস্রাব, বিরক্তি এবং ক্লান্তি ডায়াবেটিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ। তবে, মুখের ভেতরের কিছু লক্ষণও এই রোগের নীরব ইঙ্গিত হতে পারে।
আপনি কি কখনও সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মুখের ভেতরটা শুষ্ক মনে করেছেন? এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও, দাঁত এবং মাড়ির বিভিন্ন সমস্যাও ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। জেনে নিন মুখের যেসব সমস্যা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে:
১. মুখের ভেতরে শুষ্কতা (জেরোস্টোমিয়া)
মুখের ভেতরে শুষ্কতা, যা জেরোস্টোমিয়া নামে পরিচিত, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি। মুখে পর্যাপ্ত লালা উৎপাদন না হওয়ার কারণ ডায়াবেটিস হতে পারে। এর ফলে আপনি খিটখিটে এবং অতিরিক্ত তৃষ্ণার্ত বোধ করতে পারেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এই শুষ্কতা ব্যথা, আলসার, সংক্রমণ এবং দাঁতের ক্ষয়ের কারণ হতে পারে। লালা মুখের ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং খাদ্য কণা ধুয়ে ফেলে দাঁতকে রক্ষা করে।
২. মাড়ির রোগ (জিংগাইটিস ও পিরিয়ডোনটাইটিস)
ব্রাশ বা ফ্লস করার সময় কি আপনার দাঁত বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে? এটি মাড়ির রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে আপনার মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে এবং ফুলে যেতে পারে, যা জিংগাইটিস নামে পরিচিত। রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, ফলে মাড়িতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি পিরিয়ডোনটাইটিস নামে আরও গুরুতর সংক্রমণের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা দাঁতের নরম টিস্যু এবং হাড়কে ধ্বংস করে দাঁত হারানোর কারণ হতে পারে।
৩. দাঁত ক্ষয়
রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা সরাসরি দাঁতের ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। মুখে অসংখ্য ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেগুলো শর্করা এবং স্টার্চের সঙ্গে মিশে অ্যাসিড তৈরি করে, যা প্ল্যাক নামে পরিচিত। এই প্ল্যাকের অ্যাসিড আপনার এনামেলকে আক্রমণ করে, ফলে দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগ হতে পারে। দাঁত ক্ষয়ের চিকিৎসা না করা হলে তা তীব্র ব্যথা এবং সংক্রমণের কারণ হতে পারে, এমনকি দাঁত তুলতে হতে পারে।
৪. থ্রাশ (ক্যানডিডিয়াসিস)
ওরাল থ্রাশকে ক্যানডিডিয়াসিসও বলা হয়। এটি মুখের একটি ছত্রাক সংক্রমণ, যা ক্যানডিডা নামক ছত্রাকের আক্রমণে হয়। থ্রাশের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে মুখ, জিহ্বা, মাড়ি, গাল এবং মুখের ভেতরের অংশে সাদা ও লাল দাগ। এগুলো ঘা আকারেও দেখা দিতে পারে। রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা মুখের ভেতরের পরিবেশে ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। নিয়মিত মুখ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু যত্ন নিলে থ্রাশ এড়ানো যেতে পারে।
৫. মুখ এবং জিহ্বায় জ্বালাপোড়া
মুখ এবং জিহ্বায় জ্বালাপোড়া একটি কঠিন এবং কষ্টদায়ক অবস্থা, যা বার্নিং মাউথ সিন্ড্রোম নামেও পরিচিত। রক্তে শর্করার অনিয়ন্ত্রিত মাত্রার কারণে মুখের ভেতরে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হয়। এর সঙ্গে শুষ্ক মুখ, তেতো স্বাদ বা ধাতব স্বাদের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি ডায়াবেটিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে।
এই লক্ষণগুলির মধ্যে যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ দেখা গেলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসা জটিলতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।