ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিনই বহু মানুষ নতুন করে এই রোগের শিকার হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমাদের ভুল জীবনযাত্রা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই এই রোগের প্রধান কারণ। তবে উদ্বেগের বিষয় হল, রোগ ধরা পড়ার পরেও অনেকে এর সঠিক চিকিৎসা করান না এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেন না। এর ফলস্বরূপ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে একাধিক জটিল সমস্যা।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে ঠিক কী কী সমস্যা হতে পারে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
হঠাৎ করে সুগার কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া): কিছু ওষুধ বা ইনসুলিন নেওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে রোগীর মাথা ঘোরা, হাত-পা কাঁপা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই শুরু থেকেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিনি, চকোলেট বা লজেন্স খেলে উপকার পাওয়া যায়।
রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া): দীর্ঘ দিন ধরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে হাত-পা কাঁপা, ঘন ঘন প্রস্রাব, দুর্বলতা এবং মাথা ঘোরার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসা করানো আবশ্যক।
ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস: এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থা, যা মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ব্লাডসুগারের কারণে শরীর দ্রুত ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে। ফলে শরীরে ইনসুলিনের অভাব দেখা দেয়। শক্তি উৎপাদনের জন্য শরীর যখন অতিরিক্ত ফ্যাট গলাতে শুরু করে, তখন রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে শরীর অতিরিক্ত ইউরিন তৈরি করে। এর প্রধান লক্ষণগুলি হল শ্বাসকষ্ট, মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং বমি। এই সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
হাইপারস্মোলার হাইপারগ্লাইসেমিয়া: এটি তুলনামূলকভাবে বিরল একটি সমস্যা। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিরা অন্য কোনও инфекশনে আক্রান্ত হলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এর লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল দৃষ্টি চলে যাওয়া, অস্বাভাবিক কল্পনা এবং শরীরের এক দিকে দুর্বলতা অনুভব করা। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা আবারও জোর দিয়ে বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত চিকিৎসা করানো অত্যন্ত জরুরি। সামান্যতম অবহেলাও ডেকে আনতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা। তাই সচেতন থাকুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।