আমরা সাধারণত সামনের দিকেই হাঁটি এবং ব্যায়ামের সময় আমাদের শরীর সেইভাবেই অভ্যস্ত। কিন্তু ‘রেট্রো ওয়াকিং’ বা পিছনের দিকে হাঁটা শরীরের জন্য নিয়ে আসতে পারে অসাধারণ কিছু উপকারিতা। কেন একজন ব্যক্তির প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট পিছনের দিকে হাঁটার অভ্যাস করা উচিত, সেই বিষয়েই আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যখন আমরা নিয়মিত সামনের দিকে হাঁটি, তখন আমাদের পায়ের পেশী, কাফ, উরুর হাড়, নিতম্ব এবং শরীরের মূল অংশ সক্রিয় থাকে। তবে পিছনের দিকে হাঁটলে এই পেশীগুলির পাশাপাশি শরীরের নিষ্ক্রিয় পেশীগুলিও সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, পিছনের দিকে হাঁটা আমাদের শরীরের ভঙ্গি এবং ভারসাম্যের কেন্দ্রকেও পরিবর্তন করে। এর ফলে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয় বৃদ্ধি, হাঁটুর শক্তি বাড়ানো এবং কোমরের চারপাশে জমে থাকা চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।
হাঁটু ব্যথায় আরাম:
যারা হাঁটু ব্যথা বা জয়েন্টে জড়তার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য পিছনের দিকে হাঁটা বিশেষভাবে আরামদায়ক হতে পারে। কারণ পিছনের দিকে হাঁটলে হাঁটুর জয়েন্টের উপর চাপ কম পড়ে এবং হাঁটু ঘিরে থাকা পেশীগুলি শক্তিশালী হয়। এমনকি হাঁটুর আঘাত, অস্ত্রোপচার অথবা জয়েন্টের সমস্যায় চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পিছনের দিকে হাঁটতে পারেন।
ওজন কমায়:
সামনের দিকে হাঁটার চেয়ে পিছনের দিকে হাঁটলে তুলনামূলকভাবে বেশি ক্যালোরি খরচ হয়। আমরা যখন পিছনের দিকে হাঁটি, তখন আমাদের শরীরকে বেশি শক্তি ব্যয় করতে হয়। এর ফলে শরীরে অক্সিজেনের ব্যবহার বাড়ে এবং হৃদস্পন্দনও বৃদ্ধি পায়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়:
শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি পিছনের দিকে হাঁটা মস্তিষ্কের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। একই দিকে হাঁটার অভ্যাসের পরিবর্তে বিপরীত দিকে হাঁটা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং চিন্তাশক্তি উন্নত করে।
কেন এটি ভালো?
সাধারণত আমরা যখন হাঁটি, তখন প্রথমে আমাদের গোড়ালি মাটিতে পড়ে এবং তারপর আমরা আঙুল দিয়ে হাঁটি। কিন্তু পিছনের দিকে হাঁটলে এই প্রক্রিয়াটি উল্টো হয় – প্রথমে আঙুল এবং তারপর গোড়ালি মাটিতে পড়ে। স্বাভাবিকের চেয়ে এর জন্য বেশি মনোযোগ এবং চেষ্টার প্রয়োজন হয়। এর ফলে শরীর ও মস্তিষ্কের মধ্যে এক চমৎকার সমন্বয় ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ হাঁটার চেয়ে পিছনের দিকে হাঁটলে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি ক্যালোরি খরচ হয়।
অন্যান্য উপকারিতা:
এছাড়াও, পিছনের দিকে হাঁটার আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে, দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়, পায়ের নিম্নাংশের শক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং, সুস্থ থাকতে এবং শরীরের অতিরিক্ত উপকারিতা পেতে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট পিছনের দিকে হাঁটার অভ্যাস করা উচিত।