সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনায় ‘ইনফ্লামেশন’ বা প্রদাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে, যা ওজন বৃদ্ধির সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। ইনফ্লামেশন শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও, দীর্ঘস্থায়ী হলে তা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অটোইমিউন রোগের মতো একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। অনেকেই শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ নিয়ে জীবনযাপন করেন, এমনকি তা বুঝতেও পারেন না। তাই শরীরে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ চিনে রাখা জরুরি।
১. বিভ্রান্তি বা ব্রেন ফগ:
যদি আপনি প্রায়ই ভুলে যান, বিভ্রান্ত বোধ করেন অথবা কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়, তবে শুধু মানসিক চাপ বা ঘুমের অভাবকে দায়ী করবেন না। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে স্বাভাবিক যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এর ফলে মানসিক অলসতা এবং ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, যা ব্রেন ফগ নামে পরিচিত। এটি দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করে এবং সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
২. বারবার ত্বকের সমস্যা:
ব্রণ, একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে। এর প্রধান কারণ দুর্বল অন্ত্রের স্বাস্থ্য বা প্রদাহজনক খাদ্যাভ্যাস। যদি আপনার ত্বক ক্রমাগত জ্বালা অনুভব করে বা ব্রেকআউটের প্রবণতা দেখা যায়, তবে এটি হজম বা খাদ্য সংবেদনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। প্রদাহ ত্বকের স্বাভাবিক নিরাময় ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে ত্বকে ক্রমাগত অস্বস্তি বজায় থাকে।
৩. শরীরে ফোলাভাব:
হাত, মুখ বা পায়ের চারপাশে অস্বাভাবিক ফোলাভাব লক্ষ্য করলে তা শরীরে জল ধরে রাখার কারণে হতে পারে, যা প্রদাহের ফল। শরীরের প্রদাহ স্বাভাবিক তরল ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যার ফলে শরীরের কিছু নির্দিষ্ট অংশে ফোলাভাব দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে এই ধরনের ফোলাভাব বিশেষভাবে চোখে পড়তে পারে এবং এটি শরীরে অন্তর্নিহিত প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে।
৪. সবসময় ক্লান্তি অনুভব:
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ আপনার শরীরের শক্তির স্তর কমিয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও যদি আপনি ক্রমাগত ক্লান্ত এবং অবসন্ন বোধ করেন, তবে তা প্রদাহের কারণে হতে পারে। প্রদাহ শরীরের বিশ্রাম নেওয়ার এবং সঠিকভাবে সেরে ওঠার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে, যার ফলে শরীরে একটানা ক্লান্তি অনুভূত হয়। বেশিরভাগ সময় ক্লান্তি ও আলস্য অনুভব করলে শরীরে প্রদাহের উপস্থিতি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
৫. ওজনের পরিবর্তন:
যদি আপনি হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস লক্ষ্য করেন, তবে এটি প্রদাহের কারণে হতে পারে। প্রদাহ শরীরের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে শরীরের ওজনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হরমোন এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করে, ফলে শরীরের জন্য একটি সুস্থ ওজন বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
৬. মেজাজের পরিবর্তন:
শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য গভীরভাবে জড়িত। শরীরে প্রদাহ মস্তিষ্কের রসায়ন এবং হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তন করে মেজাজের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন, খিটখিটে ভাব এবং এমনকি বিষণ্ণতাও দেখা দিতে পারে। শরীরে প্রদাহের কারণে কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ হতে পারে, যা মেজাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৭. অন্ত্রের সমস্যা:
যদি ঘন ঘন পেট ফাঁপা, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অনিয়মিত মলত্যাগের মতো পেটের সমস্যা দেখা দেয়, তবে এর জন্য পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ দায়ী হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ অন্ত্রের পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে হজমে অস্বস্তি হয়। এর ফলস্বরূপ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) বা লিকি গাট সিন্ড্রোমের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অন্ত্রে প্রদাহের কারণে শরীরে পুষ্টির অভাবও দেখা দেয়, যা ক্লান্তির অন্যতম কারণ।
শরীরে এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে প্রদাহের চিকিৎসা শুরু করলে অনেক স্বাস্থ্য জটিলতা এড়ানো সম্ভব।