কর্মব্যস্ত যুবসমাজের একটা বড় অংশই আজকাল সকালের নাস্তায় ডিমের উপর ভরসা রাখছেন। দ্রুত তৈরি করা যায় এবং পুষ্টিকর হওয়ায় ডিম অনেকের প্রাতঃরাশের প্রধান পছন্দ। তবে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, সকালে খালি পেটে ডিম খাওয়া কি সত্যিই শরীরের জন্য উপকারী? সম্প্রতি হওয়া একটি সমীক্ষা এই বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ডিম খাওয়া শুরু করলে শরীরে একাধিক ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। আসুন, সেই উপকারিতাগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
১. কোলিনের ঘাটতি পূরণ: ডিম কোলিন নামক একটি জরুরি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ডিম খেলে শরীরে কোলিনের মাত্রা বাড়ে, যা স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, এটি পেশির শক্তি বাড়াতে এবং হজমক্ষমতা উন্নত করতেও সহায়ক।
২. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক: কিছু গবেষণায় ডিমের মধ্যে থাকা কোলিনকে ক্যান্সার কোষের জন্ম প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষত, এটি ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে বলে মনে করা হয়।
৩. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি: ডিম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক। এতে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান বুদ্ধির বিকাশ, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোলিন এক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর।
৪. হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: একাধিক গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত ডিম খেলে শরীরে উপকারী কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং হার্ট সুস্থ থাকে।
৫. প্রোটিনের অভাব দূরীকরণ: ডিমে অ্যালবুমিন নামক উচ্চমানের প্রোটিন থাকে, যা পেশি গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা সকালে শরীরচর্চা করেন, তাদের জন্য ডিম একটি আদর্শ খাবার, যা শক্তি যোগানোর পাশাপাশি শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
৬. পুষ্টির ঘাটতি পূরণ: প্রতিদিন একটি ডিম খেলে প্রোটিন ও ভিটামিনের চাহিদা তো মেটেই, সেইসঙ্গে ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের ঘাটতিও পূরণ হয়। সেলেনিয়াম শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৭. দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে: সকালের নাস্তায় ডিম খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, যা দিনের বেলা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করার প্রবণতা কমায়। যারা অফিসে যান, তাদের জন্য ডিম একটি স্বাস্থ্যকর এবং সময়-সাশ্রয়ী বিকল্প।
৮. শরীরে শক্তির যোগান: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরের শক্তি প্রয়োজন। ডিমে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান দ্রুত শরীরের প্রয়োজনীয় জ্বালানির চাহিদা পূরণ করে, যা ক্লান্তি দূর করে কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৯. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: পেনিংটন বায়োমেডিকাল রিসার্চ সেন্টারের একটি গবেষণা অনুযায়ী, সকালে ডিম খেলে দিনের অনেকটা সময় পর্যন্ত ক্ষুধা লাগে না। এর ফলে খাবারের পরিমাণ কমে এবং শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
১০. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি: ডিমে লুটিন এবং জিয়েক্সসেনথিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়।
সুতরাং, সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী কর্মব্যস্ত জীবনে সকালে খালি পেটে ডিম খাওয়া শরীরের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে। তবে যাদের বিশেষ কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।