কর্মক্ষেত্রের চাপ শুধু হার্ট অ্যাটাক নয়, বাড়াতে পারে ক্যান্সারের ঝুঁকিও! সত্যি কী তাই?

কর্মক্ষেত্রে প্রবল মানসিক চাপ থেকে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে, এ তথ্য কমবেশি সকলেরই জানা। কিন্তু কর্মক্ষেত্রের এই চাপ থেকেই যে ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধিও বাসা বাঁধতে পারে, এমন তথ্য হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইবেন না। তবে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, বিশেষজ্ঞেরা সম্প্রতি এমনই এক উদ্বেগজনক গবেষণালব্ধ তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা কর্মজীবীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

গবেষণা কী বলছে?
ছয়টি ইউরোপীয় দেশের ১ লক্ষ ১৬ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত এক দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে যাদের টেনশন এবং কাজের চাপ বেশি, তাদের কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। গবেষকরা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে গবেষণায় অংশ নেওয়া নারী-পুরুষদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।

গবেষক দল বিশেষত সেসব মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করেন, যাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবল মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ক্যান্সার রোগী এবং যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের তথ্য বিশদভাবে যাচাই করে দেখা যায়, গবেষণায় অন্তর্ভুক্তদের প্রায় ৫ শতাংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

ঝুঁকির কারণ ও প্রতিরোধের উপায়:
তবে ফিনিশ ইনস্টিটিউট অব অকুপেশনাল হেলথ-এর বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণার কো-অথার ক্যাটরিনা মনে করেন, চাকরির ক্ষেত্রের চাপ সাধারণভাবে ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, যদি কিছু বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকা যায়। যেমন, বয়স, লিঙ্গ, আর্থসামাজিক অবস্থান, শারীরিক গঠন (মেদবহুল না হওয়া), ধূমপান ও অ্যালকোহল পান না করা – ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টরগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

তবে গবেষণায় প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ থেকে করোনারি হার্ট ডিজিজ বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। গবেষক ক্যাটরিনা আরও মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে এবং একটি ভালো পরিবেশে কাজ করতে পারলে হার্ট অ্যাটাক অথবা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

এই গবেষণা কর্মজীবীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আধুনিক কর্মজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা মানসিক চাপকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা এবং তা কমানোর উপায় খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি। নিজেদের সুস্থ রাখতে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy