বলিউডে নিজের পায়ের তলার মাটি আরও মজবুত করছেন টলিউডের ‘ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। জুলাই মাসে তার অভিনীত ‘মালিক’ ছবি মুক্তির আগে মুম্বাইয়ে একের পর এক সাক্ষাৎকারে উঠে আসছে তার ব্যক্তিগত জীবন ও কেরিয়ারের নানা অজানা দিক। কিন্তু সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তার দেওয়া একটি উক্তি যেন একাই বলে দিল, কেমন মানুষ তিনি – “২৫ বছরে দু’বার আমার সংসার ভেঙেছে, কিন্তু ফোন নম্বর একটাই রয়েছে।”
এই বাক্যটি প্রসেনজিতের জীবনের দর্শন এবং তার বিনয়ী সত্তার এক অনবদ্য প্রতিচ্ছবি। একজন সুপারস্টার, যার দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের অভিনয় জীবনে অজস্র সাফল্য, তিনি কীভাবে তার তারকা খ্যাতিকে পায়ের তলায় রেখেছেন, এই ছোট্ট উক্তিটি তারই প্রমাণ।
জনপ্রিয় অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে হয়েও প্রসেনজিতের শুরুর জীবনটা মোটেও সহজ ছিল না। বাবা যখন পাশে ছিলেন না, তখন সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল তাকেই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বোনের বিয়ে দেওয়ার সময় এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে তার বাবা উপস্থিত থাকতে পারেননি। সেই কঠিন সময়ে প্রসেনজিৎ কার কাছে গিয়েছিলেন জানেন? টলিউডের কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে।
প্রসেনজিতের কথায় উঠে আসে, তার বোন পল্লবী চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ের দিনে টলিউডের অনেক বড় তারকাই হয়তো উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন, শুধু তাদের পরিবারকে নৈতিক সমর্থন যোগাতে। সেই দিনের স্মৃতি আজও প্রসেনজিতের মনে উজ্জ্বল, যা তাকে শিখিয়েছে সম্পর্কের গুরুত্ব।
টলিপাড়ায় কাজ শুরু করার সময়ও প্রসেনজিৎকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। শুরুর দিনগুলোয় ঠিকমতো খাওয়ার সময় পেতেন না। তখন স্টুডিয়োর বাইরে একজনের চায়ের দোকান ছিল। সেই দোকানদার নিজের খাবারের কিছুটা অংশ ভাগ করে নিতেন তার সঙ্গে। এমন সব দিন দেখেছেন বলেই হয়তো প্রসেনজিৎ বারে বারে বলেন, স্টারডাম তাকে কখনও গ্রাস করেনি, তার মাথা ঘুরিয়ে দেয়নি।
প্রসেনজিতের এই ‘একই ফোন নম্বর’ ধরে রাখার সিদ্ধান্তটি তার ব্যক্তিত্বের এক অনন্য দিক তুলে ধরে। এত বড় একজন তারকার পক্ষে ২৫ বছর ধরে একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করা সত্যিই বিরল। ডিজিটাল যুগে যেখানে মানুষ কথায় কথায় ফোন নম্বর বদলে ফেলে, সেখানে প্রসেনজিতের এই স্থিরতা প্রমাণ করে যে চাকচিক্য বা তারকাখ্যাতি তাকে ছুঁতে পারেনি। তিনি হয়তো মনে করেন, তার আসল পরিচয় একজন অভিনেতা হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে – এবং এই সারল্যই তাকে এতো দীর্ঘ সময় ধরে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে রেখেছে।
ভাঙা সংসার আর ব্যক্তিগত লড়াইয়ের মাঝেও নিজের শিকড়কে আঁকড়ে ধরে থাকা, আর স্টারডামের শিখরে উঠেও মাটির কাছাকাছি থাকা – এটাই হয়তো ‘বুম্বাদা’র আসল পরিচয়। তার এই জীবনদর্শন আজকের প্রজন্মের তারকাদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।