পূজোর মরশুম কাটতে না কাটতেই রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গি সংক্রমণ আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবরের শেষ দু’সপ্তাহেই নতুন করে ১,৬৩২ জনের ডেঙ্গি রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল এবং শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩,২০০ জন। চলতি বছরের শুরু থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যে মোট ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২,৫০৩।
সংক্রমণের শীর্ষে ছয় জেলা:
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্তের নিরিখে রাজ্যের ছয়টি জেলা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে, যেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮,৭০০ জনেরও বেশি।
- শীর্ষে উত্তর ২৪ পরগনা: আক্রান্তের সংখ্যা ২,৩২৬ জন।
- দ্বিতীয় স্থানে মুর্শিদাবাদ: আক্রান্তের সংখ্যা ২,৩০৪ জন।
- অন্যান্য উদ্বেগজনক জেলা: তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে হুগলি ও কলকাতা, যেখানে সংক্রমণ হাজারের ঘর পেরিয়েছে। মালদায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় হাজারের কোঠায়, আর হাওড়ায় ৭৫০ জনেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ ও প্রত্যাশা:
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুজোর মরশুমে প্যান্ডেল তৈরি, খোলা মণ্ডপে জল জমা, এবং নিয়মিত সাফাইয়ের অভাবে এডিস মশার প্রজননের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়। অক্টোবর মাসে টানা বৃষ্টি, তার পর শুকনো দিন, আবার বৃষ্টি—এই চক্রাকার আবহাওয়া এডিস ইজিপ্টাই মশার প্রজননের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
- নজরদারিতে ঢিলেমি: বিশেষজ্ঞদের দাবি, বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় নজরদারিতে কিছুটা ঢিলেমি এসেছিল, যার ফলেই অক্টোবরে সংক্রমণ বেড়েছে।
- আশার আলো: তবে, যদি নতুন করে আর বৃষ্টি না হয়, তাহলে তাপমাত্রা কমতে থাকায় সংক্রমণ কিছুটা কমবে বলেই আশা করছে স্বাস্থ্য ভবন।
প্রশাসনের পদক্ষেপ:
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, নবান্ন থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্যের সব জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালাতে। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির নিচে না নামা পর্যন্ত মশার প্রজনন চলতে পারে, তাই পরিত্যক্ত জমি, বাজার এলাকা ও আবর্জনার স্তূপে নিয়মিত সাফাই ও নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সরকারি হাসপাতালগুলোতে জেলা পরিদর্শকের নেতৃত্বে নিয়মিত তদারকি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রশাসন তৎপর হলেও, ভয়ের কোনো কারণ নেই বলেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।