দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরন্তন। আধুনিক জীবনযাত্রার চাপ ও খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম প্রায়শই আমাদের সুস্থ থাকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে, আমাদের প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এমন অনেক সহজ উপায় বর্ণিত আছে, যা অনুসরণ করলে কেবল সুস্থ ও সুখী জীবনই নয়, দীর্ঘায়ুও লাভ করা সম্ভব। আসুন জেনে নিই, আয়ুর্বেদ মতে খাওয়া-দাওয়া এবং জীবনযাপন সম্পর্কে কোন নিয়মগুলি মেনে চলা জরুরি।
১. খিদে পেলেও ‘কম’ খান:
আয়ুর্বেদের প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো, আমাদের খিদে মেটানোর জন্য ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ খাবার গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত ভোজন পরিপাকতন্ত্রকে দুর্বল করে তোলে, যার ফলে পেট ফোলা, ক্লান্তি এবং আলস্যের মতো সমস্যা দেখা দেয়। পেটে কিছুটা খালি জায়গা রাখলে হজম প্রক্রিয়া মসৃণ হয় এবং শরীর সতেজ থাকে।
২. দুপুরেই সারুন ভরপেট ভোজন:
আয়ুর্বেদ মতে, আমাদের শরীর দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরভাবে খাবার হজম করতে পারে। এই সময়ে আমাদের ‘পাচন অগ্নি’ (Digestive Fire) সবচেয়ে শক্তিশালী থাকে। তাই দুপুরের খাবার হওয়া উচিত পুষ্টিতে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যকর, যা সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করবে।
৩. বেশি রাতে খাওয়া নয়:
সুস্বাস্থ্যের জন্য রাতের খাবার তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা অত্যন্ত জরুরি। আয়ুর্বেদ পরামর্শ দেয় যে, ঘুমোনোর ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে ফেলা উচিত। আদর্শভাবে, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই রাতের খাবার সম্পন্ন করা ভালো। বেশি রাতে খেলে গ্যাস, অম্বল এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
৪. গরম ও রান্না করা খাবারের প্রাধান্য:
আয়ুর্বেদ কাঁচা ও ঠান্ডা খাবারের তুলনায় গরম ও সদ্য রান্না করা খাবারকে বেশি প্রাধান্য দেয়। কারণ, গরম খাবার সহজে হজম হয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে তোলে। এর ফলে শরীর খাবার থেকে দ্রুত ও পরিপূর্ণ পুষ্টি শোষণ করতে পারে।
৫. মাঝে মাঝে উপোস (লঙ্ঘন):
হজমতন্ত্রকে বিশ্রাম দিতে এবং শরীরের আত্ম-নিরাময় প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করতে মাঝে মাঝে উপোস বা ‘লঙ্ঘন’ অত্যন্ত দরকারি। বিশেষ করে যাদের হজমগত সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই অভ্যাস বেশ উপকারী। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করতেও সাহায্য করে।
৬. মনোযোগ সহকারে ভোজন:
খাওয়ার সময় আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ যেন খাবারের দিকেই থাকে। তাড়াহুড়ো না করে, প্রতিটি গ্রাস ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। খাওয়ার সময় টিভি বা মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এতে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টি উপভোগ করা যায় না এবং হজমেও ব্যাঘাত ঘটে।
৭. খাওয়ার আগে জল পান:
আয়ুর্বেদ মতে, খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে জল পান করা উচিত। খাওয়ার সময় বা ঠিক পরেই বেশি জল পান করলে পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যায়, যা হজমের গণ্ডগোল সৃষ্টি করতে পারে। খাওয়ার আগে জল পান করলে তা হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে।
এই আয়ুর্বেদিক নিয়মগুলো দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা কেবল রোগমুক্ত ও সুস্থ জীবনই নয়, দীর্ঘায়ুও লাভ করতে পারি।