‘সাদা বিষে’র মারণফাঁদ প্রতিদিনের লবণেই বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি, WHO-র চাঞ্চল্যকর সতর্কবার্তা!

রান্নার কথা লবণ ছাড়া ভাবাই যায় না, এটি কেবল খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, বরং শরীরের জন্যও অত্যাবশ্যক। কিন্তু এই অতি পরিচিত উপাদানটিই মাত্রাতিরিক্ত হলে নীরব ঘাতকের রূপ নিতে পারে! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এক চাঞ্চল্যকর সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, প্রতিদিনের লবণেই লুকিয়ে আছে কোটি কোটি মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকি।

পুষ্টিবিদেরা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উভয়েই জোর দিয়ে বলছেন, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের জন্য দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ গ্রহণ করা একেবারেই অনুচিত। এই সীমা অতিক্রম করলেই শরীরে বাড়তে থাকে সোডিয়ামের মাত্রা, যা সরাসরি উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মতো মারণব্যাধিকে ডেকে আনে।

WHO আরও জানিয়েছে, শরীরকে সুস্থ রাখতে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম – উভয় উপাদানই অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং পটাশিয়ামের অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। আর যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে, তবে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। মেডিক্যাল এক্সপার্টরাও একমত যে, লবণে সোডিয়ামের পরিমাণ পটাশিয়ামের চেয়ে অনেকটাই বেশি থাকে। ফলে, যারা বেশি লবণ খান, তারা অজান্তেই নিজেদের শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম ঢুকিয়ে দেন, যা বিপুল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

WHO-এর ভয়াবহ পরিসংখ্যান: বছরে ৩০ লক্ষ মৃত্যু

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণ রীতিমতো ভয়াবহ। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লবণ সেবনের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে মারা যান। সমীক্ষায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের অনেকেই নিয়মিত ৫ গ্রামের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি অর্থাৎ ৯-১২ গ্রাম পর্যন্ত লবণ গ্রহণ করেন। সংস্থাটি দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছে, যদি লবণ খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়, তবে এর মধ্যে অন্তত ২৫ লাখ প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে? সহজ সমাধান

আপনার প্লেটে থাকা প্রতিটি অতিরিক্ত কণা লবণ হয়তো নীরবে আপনার শরীরের ক্ষতি করছে। এই নীরব ঘাতককে রুখতে কিছু সহজ পদক্ষেপ নিতে পারেন:

  • লবণের কৌটো সরিয়ে দিন: খাবার টেবিলে লবণের কৌটো রাখা বন্ধ করুন। এতে অভ্যাসবশত অতিরিক্ত লবণ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারবেন।
  • স্ন্যাক্স বাছুন বুঝে: খিদে পেলে চিপস বা অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত ও উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত স্ন্যাক্স এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে ফল, বাদাম বা লো-সোডিয়াম ফুড আইটেম কেনার অভ্যাস করুন।
  • লেবেল পড়ুন: প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে তার পুষ্টিগুণ (Nutritional Facts) পরীক্ষা করুন। ‘লো সোডিয়াম’ বা ‘নো অ্যাডেড সল্ট’ লেখা পণ্যগুলি বেছে নিন।

সচেতনতা এবং সামান্য কিছু অভ্যাস পরিবর্তনই আপনাকে এই নীরব ঘাতক থেকে বাঁচাতে পারে। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হোন, সঠিক পরিমাণে লবণ খেয়ে সুস্থ জীবনযাপন করুন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy