বিয়ে মানেই কি শুধু ভালোবাসার রঙে রঙিন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা? মনোবিদরা বলছেন, ভালোবাসার আবেগ সামলে জীবনের কঠিন বাস্তবতার কিছু প্রশ্ন  জেনে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই ঠিক করে দিতে পারে আপনার ভবিষ্যৎ দাম্পত্যের গতিপথ।

আমেরিকার জনপ্রিয় ম্যারেজ প্ল্যাটফর্ম Brides.com-এর ম্যারেজ এক্সপার্ট হ্যাটি জে লি-এর মতে, “অনেকেই বাগদানের পর আসল কথাবার্তা শুরু করেন। অথচ এগুলো আগেই করা উচিত। তা না হলে পরে ভুল বোঝাবুঝি বা বিচ্ছেদের আশঙ্কা থেকে যায়।” তাই, আপনার স্বপ্নের সঙ্গীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার আগে জেনে নিন কোন পাঁচটি প্রশ্ন আপনাকে অবশ্যই করতে হবে।

১. সাধারণ জীবন নাকি বিলাসবহুল জীবন – আপনার সঙ্গী কী চান?

আর্থিক বোঝাপড়া যে কোনো সম্পর্কের মেরুদণ্ড। আপনি হয়তো সাদামাটা জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী, কিন্তু আপনার সঙ্গীর যদি থাকে বিলাসবহুল জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষা, তাহলে ভবিষ্যতে সংঘাত অনিবার্য। তাই বিয়ের আগেই সঙ্গীর আয়-ব্যয়, সঞ্চয় এবং কোনো ঋণ আছে কিনা, সে বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা উচিত। তিনি কীভাবে টাকা খরচ করেন বা সঞ্চয় করেন, তা জানা থাকলে ভবিষ্যৎ আর্থিক পরিকল্পনা সহজ হবে।

২. সন্তান চান কি না – এই বিষয়ে তার অবস্থান কী?

সন্তান পরিকল্পনা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এই বিষয়ে দুজনের মতামত এক হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি কেউ সন্তান না চান, তবে তা বিয়ের আগেই সঙ্গীকে জানিয়ে দিন। আবার, সন্তান ধারণে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে IVF করাবেন নাকি দত্তক নেবেন, এসব বিষয়েও আগে থেকে মতামত জেনে রাখা ভালো। সময়ের সাথে মতামত বদলাতে পারে, কিন্তু এখনকার অবস্থান জানা থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. সন্তান পালনের দায়িত্ব কে নেবেন – পরিকল্পনা কী?

শুধু সন্তান চাইলেই হবে না, তাকে বড় করার দায়িত্ব কে কীভাবে নেবেন, সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। যদি দুজনেই কর্মজীবী হন, সেক্ষেত্রে সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব কার ওপর পড়বে? স্ত্রীকে কি চাকরি ছেড়ে ঘরে থাকতে হবে, নাকি স্বামীও সমানভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নেবেন? এই সমস্ত বিষয়ে আগে থেকেই বোঝাপড়া থাকা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে কোনো চাপ বা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি না হয়।

৪. বিয়ের গুরুত্ব তার কাছে কতটা?

বিয়ে মানে কী – শুধুই সামাজিক বা আইনি বন্ধন, নাকি এটি একটি সমান অংশীদারিত্বের সম্পর্ক? আপনার সঙ্গীর কাছে বিয়ের সংজ্ঞা কী, তা জেনে নেওয়া খুব জরুরি। কেউ হয়তো বিয়েকে নিছকই একটি চুক্তি মনে করেন, আবার কেউ একে সারা জীবনের এক গভীর সম্পর্ক হিসেবে দেখেন। এই সম্পর্কের থেকে কার কী প্রত্যাশা, তা আগে থেকে জানা থাকলে ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা এড়ানো যায়।

সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি: সঠিক প্রস্তুতি

মনোবিদদের মতে, কোনো দাম্পত্যই ‘ডিভোর্স-প্রুফ’ নয়। তবে, বিয়ের আগে এই কঠিন প্রশ্নগুলো করা গেলে অনেক ভুল বোঝাবুঝি, মনোমালিন্য এবং মানসিক দূরত্ব এড়ানো সম্ভব। একটি সুখী ও সফল দাম্পত্য জীবনের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক প্রশ্ন করে সম্পর্কের ভিত মজবুত করা অত্যন্ত জরুরি। তাই, আবেগের বশবর্তী না হয়ে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস দেখান এবং জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নিন।