শরীরের যে কোনও ব্যথা ভালো নয়, পেশির ব্যথা হলে সাবধান!

শারীরিক কোনও ব্যথাই আমাদের জন্য সুখকর নয়। তার মধ্যে পেশির ব্যথা অত্যন্ত কষ্টদায়ক হতে পারে। তাই এই বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। দৈনন্দিন জীবনে ভারী জিনিস তুলতে গিয়ে, দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় বসে থাকার কারণে অথবা রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ হাঁটার ফলে পেশিতে ব্যথা অনুভব হতে পারে।

তবে শুধু এই কারণগুলোই নয়, আরও অনেক অপ্রত্যাশিত কারণে হঠাৎ করেই পেশিতে টান ধরতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনও প্রকার পূর্বWarning ছাড়াই আচমকা পেশিতে টান লাগলে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। এই ব্যথা কখনও কখনও দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের ভোগাতে থাকে।

এখন প্রশ্ন জাগে, আমাদের মাংসপেশিতে আসলে কেন ব্যথা হয়? আসুন, সেই কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক –

১. দীর্ঘক্ষণ ধরে হাঁটা, একই জায়গায় বসে কাজ করা, একটানা গাড়ি চালানো এবং কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে আমাদের কাঁধ, ঘাড় ও পিঠের মাংসপেশিতে টান ধরতে পারে।

২. শরীরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জলের অভাব থাকে, তাহলেও মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

৩. ব্যায়াম, খেলাধুলা বা অন্য কোনও শারীরিক কসরতের আগে যদি ওয়ার্মআপ বা শরীর গরম করার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা না হয়, তাহলে পেশিতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪. যখন পেশি ক্লান্ত থাকে, সেই অবস্থায় হঠাৎ করে কোনও নড়াচড়া করলে ব্যথা লাগতে পারে।

৫. অপ্রত্যাশিতভাবে হঠাৎ করে ভারী কোনও জিনিস তোলার চেষ্টা করলে পেশিতে টান লেগে ব্যথা হতে পারে।

৬. মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণেও অনেক সময় পেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়।

৭. শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের অভাব ঘটলে পেশিতে ব্যথা হতে পারে।

এমতাবস্থায় আমাদের কী করা উচিত?

হঠাৎ করে মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব করলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যদি সম্ভব হয়, তাহলে ব্যথার জায়গায় বরফ লাগালে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। পিঠ, ঘাড় ও কোমরে ব্যথা হলে সেখানে ঠাণ্ডা জলের বোতল চেপে ধরে রাখলেও সাময়িক আরাম পাওয়া যেতে পারে।

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় এই ধরনের ব্যথা উপশমের জন্য চারটি বিশেষ ব্যায়ামের কথা বলেছেন। এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়।

ফিগার ফোর হিপ স্ট্রেচ:

দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করার পর যখন উঠতে যাওয়া হয়, তখন অনেক সময় কোমরে টান লাগতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ফিগার ফোর হিপ স্ট্রেচ ব্যায়ামটি খুবই উপযোগী। প্রথমে হাঁটুর উপরে এক পা তুলে বসতে হবে। পা তোলার পর সেটিকে দেখতে অনেকটা ইংরেজি চার (4) অক্ষরের মতো লাগবে। এরপরে শরীর সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকাতে হবে। আপনি অনুভব করবেন আপনার হিপের অংশে টান পড়ছে। এই অবস্থায় ১০ সেকেন্ড ধরে থাকুন। এরপর পা পরিবর্তন করে তিন-চার বার এই ব্যায়ামটি করলে আরাম পাওয়া যাবে। নিয়মিত এই ব্যায়াম অভ্যাস করলে কোমরে টান লাগার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ:

দাঁড়ানো অবস্থায় একটি পা চেয়ারের উপরে তুলে সামনের দিকে ঝুঁকলে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান অনুভব করা যায়। এটি চেয়ারে বসেও করা যেতে পারে। একটি পা মাটিতে রেখে অন্য পা সোজা করে সামনের দিকে টান করে শরীর ঝুঁকাতে হবে। আপনি চাইলে শূন্যে না রেখে অন্য কোনও চেয়ারের উপরেও পা তুলে রাখতে পারেন।

চেয়ার সাপোর্টেড শোল্ডার ফ্লেক্সন:

ঘাড় অথবা পিঠের মাংসপেশিতে ব্যথা হলে এই ব্যায়ামটি করা যেতে পারে। প্রথমে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে কোনও চেয়ার বা গ্রিলের মতো কিছু ধরুন, যেখানে আপনি আপনার দুটি হাত সোজা করে রাখতে পারবেন। এরপর পা সোজা রেখে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন। এটি করার ফলে পিঠের অংশের পেশিতে টান পড়বে। তবে নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।

ওয়াল সাপোর্টেড কাফ স্ট্রেচ:

দেয়ালের দিকে মুখ করে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং দুটি হাত সোজা করে দেয়াল ধরুন। দেয়ালের দিকে ধাক্কা দেওয়ার মতো জোর প্রয়োগ করুন। এর সাথে সাথে একটি হাঁটু ভাঁজ করে সামনের দিকে এগিয়ে রাখুন। অন্য পাটি প্রায় তিন ফুট মতো পিছনের দিকে সোজা করে টানটান রাখুন। খেয়াল রাখবেন পেছনের পায়ের গোড়ালি যেন মাটির সাথে লেগে থাকে। এই অবস্থায় কিছুক্ষণ থাকলে কাফ মাংসপেশিতে টান অনুভব করবেন। এটি নিয়মিত অভ্যাস করলে মাংসপেশির ব্যথা কমতে সাহায্য করবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy