অনলাইনে প্রতারণা রুখতে যখন সাইবার বিশেষজ্ঞরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছেন, ঠিক তখনই AI ব্যবহার করে লোক ঠকানোর এক নতুন কৌশলে নেমে পড়েছে সাইবার প্রতারকরা। এর সর্বশেষ শিকার হয়েছেন মধ্য কলকাতার এক শিল্পপতি, যিনি সোমবার ১০ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন এক অভিনব সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে। এক্ষেত্রে সাইবার ঠগেরা শিল্পপতির হিসেবরক্ষকের ফোন হ্যাক করে এই ‘অপারেশন’ চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
কীভাবে ঘটল এই প্রতারণা?
রবিবার রাতে শিল্পপতির সংস্থার হিসেবরক্ষকের হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা আসে। প্রেরকের ডিপিতে ছিল মালিকের চেয়ারে বসে থাকার ছবি এবং লেখা ছিল, “এটা আমার নতুন নম্বর। সেভ করে রাখো।” ছবিটি দেখে এবং বার্তার ধরণ দেখে হিসেবরক্ষক সেটিকে মালিকের নতুন নম্বর ভেবে নিজের মোবাইল সেটে সেভ করে রাখেন।
এরপরই শুরু হয় আসল খেলা:
সোমবার সকালে দু’বার বার্তা: ওই নতুন নম্বর থেকে হিসেবরক্ষককে দুটি মেসেজ আসে – “অফিসে পৌঁছে গিয়েছো?”
মালিকের নকল কণ্ঠস্বরে কল: আধঘণ্টা পরে ওই নম্বর থেকে মালিকের গলায় একটি কল আসে। প্রতারক বলে, “কোম্পানির ফান্ড চেক করে আমাকে জানাও। একটা স্ক্রিনশটও শেয়ার করে দিও।”
ভুয়া নির্দেশ: নির্দেশ পালন করার পর ফের মেসেজ আসে, “আমি এমন একটা জায়গায় রয়েছি যেখান থেকে কল করা সম্ভব নয়। ওমুক অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দাও।”
হিসেবরক্ষক, যিনি এর আগেও মালিকের নির্দেশে এই ধরনের লেনদেন করেছেন, তিনি নির্দেশ পালন করে টাকা পাঠিয়ে দেন। তবে অবাক করা বিষয় হলো, টাকা পাঠানোর পর যখন তিনি মালিকের আসল নম্বরে ফোন করেন, সেই কলটিও প্রতারকের দেওয়া ভুয়া নম্বরে ডাইভার্ট হয়ে চলে যায়! এর প্রায় আধঘণ্টা পরে মালিক এবং কর্মীর মধ্যে সত্যিকারের কথা হলে, ততক্ষণে পুরো টাকাটা একটি অজানা অ্যাকাউন্টে চলে গেছে।
সোমবার বিকেলে প্রতারণার বিষয়টি জানিয়ে হেয়ারস্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে, সেই ব্যাঙ্ককেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
AI-এর অপব্যবহারে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা
সাইবার বিশেষজ্ঞরা এআই-এর এহেন অপব্যবহারে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। সাইবার বিষয়ক সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, “কিছুদিন আগে পার্ক স্ট্রিটের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে একই রকমের প্রতারণার ঘটনা ঘটে। সেখানে ম্যানেজারের কাছে পরিচিত কাস্টমারের নামে ফোন গেলে তিনি টাকা ট্রান্সফার করার পরে বিষয়টি জানা যায়। পরে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও পুরো টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি।”
প্রতারণা রুখতে কী করবেন?
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এ ধরনের ঘটনায় ভিতরের কেউ জড়িত না থাকলে এমন প্রতারণা হওয়া সম্ভব নয় – হতে পারে ব্যাঙ্কের কেউ অথবা সংস্থারই কেউ। তাই, বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলা অত্যন্ত জরুরি।
ক্রস চেক: ফোনে নির্দেশ এলেও এমন কোনো তথ্য ক্রস চেক করে নেওয়া উচিত, যা কেবল দুইজন ব্যক্তি ছাড়া তৃতীয় পক্ষের জানা সম্ভব নয়।
দ্রুত পদক্ষেপ: একবার এই ভুলের ফাঁদে পা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩০ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ নথিভুক্ত করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, যত দ্রুত অভিযোগ দায়ের করা হবে, তত তাড়াতাড়ি প্রতারকদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করে টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব।
এই ধরনের অত্যাধুনিক প্রতারণা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণই একমাত্র উপায়।