১৬ মাস বয়সী ছোট্ট অস্মিকা দাস, যে স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (SMA) নামক এক বিরল জিনঘটিত রোগে আক্রান্ত ছিল, অবশেষে পেল তার জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন। সম্পূর্ণ ৯ কোটি টাকা দিয়ে এই Zolgensma ইঞ্জেকশনের প্রথম কিস্তি তাকে দেওয়া হয়েছে, যা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র নেটিজেনদের নিরন্তর প্রচেষ্টা এবং ভালোবাসায় ভরা ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে। রানাঘাটের শুভঙ্কর দাসের মেয়ে অস্মিকার জীবন বাঁচাতে সমাজের সব স্তরের মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তা এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে।
অস্মিকার বাবা শুভঙ্কর দাস, যিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, তাঁর মেয়ের জীবন বাঁচানোর এই মহৎ উদ্যোগে নেটিজেনদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ের প্রতি ভালোবাসার টানে সমাজের সব স্তরের মানুষ এগিয়ে এসে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আগে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই আমরা সফলভাবে ক্রাউড ফান্ডিং করতে সক্ষম হই।” ভবিষ্যতে অস্মিকাকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন, “আমি চাই আমার মেয়ে বড় হয়ে মানুষকে বাঁচাক। মানবতার জন্য লড়াই করুক।”
SMA কী এবং অস্মিকার চিকিৎসা
অস্মিকা টাইপ ১ এসএমএতে আক্রান্ত, যা প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লেও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই বিরল জিনঘটিত রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ কোটি টাকা দামের এক ডোজ Zolgensma ইঞ্জেকশন। অস্মিকার দ্বিতীয় জন্মদিনের আগেই এই ইঞ্জেকশনটি দেওয়ার কথা ছিল এবং ১৭ মাস বয়সেই সে এটি পেল।
বুধবার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ডাঃ সংযুক্তা দে-র তত্ত্বাবধানে অস্মিকাকে সফলভাবে জোলজেনসমা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। ডাঃ দে ব্যাখ্যা করেন, “যদি বাবা-মায়ের জিনগত সমস্যা থাকে, তাহলে শিশুর শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে SMA প্রোটিন তৈরি করে না, যার ফলে পেশী এবং স্নায়ুর অবনতি ঘটে।”
বাংলার আরও শিশুদের জন্য সাহায্যের আর্তি
অস্মিকার এই লড়াইয়ের জয় নিঃসন্দেহে আশার আলো দেখালেও, বাংলার আরও অনেক শিশু এই একই রোগে আক্রান্ত। সোনারপুরের হৃদিকা এবং আরও একজন শিশুও SMA-তে ভুগছে। হৃদিকার মা হেমন্তী দাস মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের মতো পরিবারের পক্ষে ৯ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। আমি সরকার এবং জনগণের কাছে আবেদন করছি যে তারা যেন অস্মিকার মতো আমার মেয়ের পাশেও দাঁড়ান।”
ডাঃ সংযুক্তা দে এই ধরনের রোগের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সকলকে এত ব্যয়বহুল ইঞ্জেকশন দেওয়া সম্ভব নয়। আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি যে এই ধরণের জিনগত সমস্যাযুক্ত অভিভাবকদের শনাক্ত করতে থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগ কমাতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করা হোক।”
অস্মিকার ঘটনা প্রমাণ করে দিল, সম্মিলিত মানবিক উদ্যোগ কতটা শক্তিশালী হতে পারে। তবে, এমন বিরল রোগের চিকিৎসা ব্যয়ভার এবং সচেতনতার অভাব দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। সরকার এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এমন আরও অনেক জীবনকে বাঁচিয়ে তুলতে।