বিহার বিধানসভা নির্বাচনের মুখে মোকামা আসনে জন সুরজ পার্টির সমর্থক দুলারচন্দ যাদবের রহস্যজনক মৃত্যু এবং জেডিইউ প্রার্থী অনন্ত সিংয়ের গ্রেপ্তারিকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (CEC) জ্ঞানেশ কুমার সাফ জানিয়েছেন, ভোট প্রক্রিয়া ঘিরে সামান্যতম হিংসাও বরদাস্ত করবে না কমিশন।
ঘটনার সূত্রপাত:
বৃহস্পতিবার মোকামায় জন সুরজ পার্টির প্রার্থী পীয়ূষ প্রিয়দর্শীর প্রচার চলাকালীন হামলার শিকার হন দুলারচন্দ যাদব। প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায়, সংঘর্ষের সময় তাঁর ফুসফুস ফেটে যায় এবং একাধিক পাঁজর ভেঙে যায়। যদিও ময়নাতদন্তে গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নাকচ করা হয়েছে, যা এই মৃত্যুকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, ওই দিন দুই দলের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং সেই সময়ই যাদবের মৃত্যু ঘটে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে জেডিইউ প্রার্থী অনন্ত সিং এবং তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ উপস্থিত ছিলেন।
এই ঘটনায় পুলিশ তিনটি আলাদা এফআইআর দায়ের করেছে। যার মধ্যে একটিতে দুলারচন্দ যাদবের নাতি সরাসরি অনন্ত সিং এবং আরও চারজনের নাম উল্লেখ করেছেন। রবিবার ভোরবেলা প্রাক্তন জেডিইউ বিধায়ক তথা প্রার্থী অনন্ত সিংকে গ্রেপ্তার করে পাটনা পুলিশ।
কমিশনের কড়া বার্তা:
এই উত্তপ্ত আবহে আইআইটি কানপুরের এক অনুষ্ঠানে CEC জ্ঞানেশ কুমার বলেন, ‘আমার আবেদন, আপনারা প্রত্যেকে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। প্রত্যেকে যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিতে পারেন, তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কোথাও-কোনও রকম হিংসা সহ্য করা হবে না।’
বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর পক্ষ থেকে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রসঙ্গে CEC জ্ঞানেশ কুমার জোর দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে কোনও শাসক বা বিরোধী দল বলে কিছু নেই, সবাই নিরপেক্ষ।’ তিনি বলেন, বিহারের ভোট শুধু স্বচ্ছতার সঙ্গেই সম্পন্ন হবে না, তা ভারতীয় এবং বিশ্বের নির্বাচনের ইতিহাসে মানদণ্ড হয়ে থাকবে বলে তিনি আশা করছেন।
এদিকে, এই হিংসার ঘটনার পরই নির্বাচন কমিশন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। পাটনার গ্রামীণ এসপি বিক্রম সিহাগকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বারহ মহকুমার তিন আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে বারহ-২ মহকুমার এসডিপিও অভিষেক সিংকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিহার নির্বাচনের দিনক্ষণ:
বিহারের প্রথম দফার নির্বাচন ৬ নভেম্বর, দ্বিতীয় দফার নির্বাচন ১১ নভেম্বর এবং ভোট গণনা ১৪ নভেম্বর হবে। মোকামার এই ঘটনা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনীতিতে বড়সড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।