আহমেদাবাদের মেঘানিনগরে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ২৯ ঘণ্টা পেরিয়েছে। ২৪২ আরোহীর মধ্যে মাত্র একজন জীবিত, বাকিদের মর্মান্তিক মৃত্যু। কিন্তু এই বিপর্যয়ের কয়েক সেকেন্ড আগে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এ কী ঘটেছিল? ইন্ডিয়া টুডে টিভি সূত্রে জানা যাচ্ছে, শেষ মুহূর্তে বিমানের পাইলট সুমিত সবরওয়াল এটিসিকে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা ছিল এক হাড়হিম করা আর্তনাদ: “নো থ্রাস্ট, বিমান পড়ে যাচ্ছে, মেডে!” এই বার্তাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, টেক-অফের পরপরই ভয়ংকর কিছু ঘটেছিল বিমানটির সঙ্গে।
দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে বিমানটি রানওয়ে ছাড়ার ঠিক পরেই এটিসিকে ‘মেডে কল’ করেন পাইলট। এরপর এটিসি বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা করলেও আর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এই সংক্ষিপ্ত কিন্তু মর্মান্তিক বার্তাগুলিই স্পষ্ট করে দিচ্ছে, বিমানটিতে গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল।
ভয়াবহতা: ২৪১ জনের মৃত্যু, জীবিত কেবল একজন
লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়া এই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ছিলেন মোট ২৪২ জন। এর মধ্যে ২৩০ জন যাত্রী, ২ জন পাইলট এবং ১০ জন ক্রু মেম্বার। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। বেঁচে আছেন মাত্র একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা কতটা ছিল।
ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার: রহস্য উন্মোচনের চাবিকাঠি
দুর্ঘটনার ২৮ ঘণ্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু এই খবর নিশ্চিত করেছেন। বিমানের লেজের কাছে থাকা কমলা রঙের এই যন্ত্রটিই এখন দুর্ঘটনার তদন্তে মূল চাবিকাঠি। এটি ডিকোড করা হলেই জানা যাবে শেষ মুহূর্তের কথোপকথন এবং বিমানের ভেতরের সমস্ত ডেটা, যা দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত: তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা কেন ঘটল, তা নিয়ে এখনো রয়ে গেছে রহস্য। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু আরও জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। সিভিল হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত ২৭০টি দেহ আনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী বলেন, “এই ঘটনাটিকে মন্ত্রক অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (AAIB) তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং পরিস্থিতির পর্যালোচনার জন্য AAIB-র ডিজি তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।”
এদিকে, দুর্ঘটনার পর রবিবার থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত বোয়িং ড্রিমলাইনার বিমানের জন্য অতিরিক্ত সেফটি চেক শুরু করা হয়েছে। ব্ল্যাক বক্সের ডেটা এবং উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটিই এখন এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পেছনের আসল রহস্য উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।