ফলের রাজা আম: রসালো হলেও বুঝেশুনে খান, জানালেন পুষ্টিবিদ

গ্রীষ্মের আগমন মানেই বাঙালির রসনা তৃপ্তির সময়। আম, জাম, লিচু, কাঁঠালের মতো সুস্বাদু ফলে বাজার ভরে ওঠে। তবে ফলের রাজা আম যেমন স্বাদে অতুলনীয়, তেমনই অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন ফলও মন কাড়ে। কিন্তু এই ফলগুলি কেবল রসালো আর মিষ্টিই নয়, এদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি। তাই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্য এই ফলগুলি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এই বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত।

শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত জানান, গরমকাল মানেই আমের জয়জয়কার। এই মরসুমে আম না খেলে যেন বড় কিছুই মিস করা হয়ে যায়। তবে আমের গুণাগুণের পাশাপাশি কিছু সমস্যাও তৈরি হতে পারে। শুধু আম নয়, এই সময়ের জনপ্রিয় ফল লিচু, তালশাঁসও বুঝে শুনে খাওয়া উচিত।

তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালীন ফলগুলির স্বাদ ও গন্ধ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই এগুলিতে ক্যালোরির পরিমাণও অনেক বেশি। বিশেষত যাদের শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদের এই ফলগুলি খাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। তাই শুধু স্বাদের জন্য নয়, নিজের শরীরের চাহিদা বুঝে গ্রীষ্মকালে খাদ্যতালিকায় ফল যোগ করা উচিত।

ক্যালোরি মেপে খান:

পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা রায় দত্তের মতে, যেকোনো ফলই ব্যক্তির ডায়েটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাওয়া উচিত। কারণ বেশিরভাগ রোগের মূলে রয়েছে স্থূলতা। কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যায় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অপরিহার্য। তাই আম, কাঁঠাল বা লিচুর মতো উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত ফল খেলে খাদ্যতালিকা থেকে অন্যান্য খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে। মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে বিস্কুট বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে মরশুমি ফল খাওয়া তুলনামূলকভাবে ভালো। এই ধরনের ফলে প্রাকৃতিক ফ্রুক্টোজ থাকে যা পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা যায়। সাধারণত, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদিনে একটি মাঝারি আকারের আম, বড় কোয়ার দুটি কাঁঠাল অথবা চার-পাঁচটি লিচু খাওয়া যেতে পারে।

আমের ভালো-মন্দ:

আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে শর্মিষ্ঠা দেবী বলেন, আমের মধ্যে ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম থাকলেও এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে কম। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের খুব বেশি আম খেতে নিষেধ করা হয়। আমের সঙ্গে কী খাচ্ছেন, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন, আম দিয়ে পায়েস বা সন্দেশের মতো খাবার দুপুরে বা রাতের খাবারের শেষে প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, সকালের খাবারে ওটস বা ডালিয়ার মতো উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবারের সঙ্গে এক টুকরো আম খাওয়া যেতে পারে। তবে একসঙ্গে তিন-চারটি আম খাওয়া একেবারেই অনুচিত।

কাঁঠালের কার্যকারিতা:

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় রাতের খাবারের পর প্রতিদিন এক-দু কোয়া কাঁঠাল খাওয়া উপকারী হতে পারে। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বা অস্টিওআর্থারাইটিসের সমস্যায় খাদ্যতালিকায় কাঁঠাল রাখা যেতে পারে। কাঁঠাল থাইরয়েড হরমোনের মেটাবলিজমেও সাহায্য করে। তাই থাইরয়েড রোগীরাও সারাদিনে এক-দুই কোয়া কাঁঠাল খেলে উপকার পেতে পারেন।

তালশাঁসে কী আছে?

কিডনির সমস্যায় সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও জল খাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকে। এই কারণে গরমে রোগীদের অনেক কষ্ট হয়। শর্মিষ্ঠা রায় দত্তের মতে, তালশাঁস এক্ষেত্রে জলের খুব ভালো বিকল্প হতে পারে। তালশাঁসে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের পরিমাণ খুবই কম থাকে এবং এটি শরীরের জলের চাহিদাও পূরণ করে। সাধারণত, যে কেউ দিনে দু-তিনটি তালশাঁস খেতে পারেন। এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা ওজন কমাতেও সহায়ক।

লিচু খান শরীর বুঝে:

লিচুর মিষ্টি স্বাদ অনেকেরই প্রিয়। তবে শর্মিষ্ঠা দেবী জানান, লিচুর মধ্যে সুগারের পরিমাণ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের এটি বুঝে খেতে হবে। মিড-মর্নিং বা বিকেলে চার-পাঁচটি লিচু খাওয়া যেতে পারে। লিচুতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় কিডনির সমস্যা থাকলে এটি খাওয়া উচিত নয়। তবে লিচুতে ভিটামিন বি১২ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট present। থাইরয়েড রোগীদেরও খুব বুঝে লিচু খাওয়া উচিত বলে তিনি পরামর্শ দেন।

পরিশেষে শর্মিষ্ঠা রায় দত্তের পরামর্শ, গ্রীষ্মকালীন ফলগুলি অবশ্যই উপভোগ করুন, তবে নিজের শরীরের প্রয়োজন ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরিমিত পরিমাণে খান। সুস্থ থাকতে হলে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা জরুরি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy