পেশি না হারিয়ে ওজন কমানোর উপায়, জেনেনিন সেরা টিপস

স্বাস্থ্য ডেস্ক: শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর চেষ্টায় অনেকেই এমনভাবে খাদ্যতালিকা তৈরি করেন যে তাতে ভুলবশত পেশি (Lean Muscle) কমে যায়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে পেশি কমে যাওয়া মানে শরীরের বিপাকক্রিয়া কমে যাওয়া, চর্বি পোড়ানোর ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া এবং ত্বক ঝুলে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি। এটি দীর্ঘমেয়াদি শক্তি ও সহনশীলতাও কমিয়ে দেয়।

সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসপি) বিপাক বিশেষজ্ঞ এলেইন দিয়াস বলেন, “ওজন কমানো মানে শুধু দাঁড়িপাল্লার সংখ্যাটা কমানো নয়। বরং শরীরের কার্যকর ও মূল্যবান অংশ অর্থাৎ মাংসপেশি ধরে রাখা।”

পেশি ধরে রেখে ওজন কমানোর ৩টি উপায়
শরীরে যখন অতিরিক্ত বা অপরিকল্পিতভাবে ক্যালরি ঘাটতি তৈরি হয়, তখন শরীর শক্তি সাশ্রয় করতে শুরু করে এবং শক্তি বাঁচাতে মাংসপেশি ভাঙা শুরু করতে পারে। এই ঝুঁকি এড়াতে নিচের উপায়গুলি অনুসরণ করা জরুরি:

১. প্রোটিনের ভারসাম্য ও মাঝারি ক্যালরি ঘাটতি
পেশি গঠনে প্রোটিনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো জরুরি।

প্রোটিনের সঠিক মাত্রা: ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস নিউট্রিশন সোসাইটির মতে, পেশি ধরে রাখতে প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.৪ থেকে ২ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। অর্থাৎ, ৭০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তির দিনে ৯৮ থেকে ১৪০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। প্রতি বেলার খাবারের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ যেন প্রোটিন উৎস থেকে আসে।

ক্যালরি ঘাটতির সীমা: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০০ ক্যালরি বা ফ্যাট বার্ন করা আদর্শ। এর চেয়ে বেশি হলে শরীর মাংসপেশি পোড়ানো শুরু করতে পারে। যদি ৫০০ ক্যালরি ঘাটতি কঠিন মনে হয়, তাহলে ৩০০ ক্যালরি কমিয়ে শুরু করতে পারেন।

২. স্ট্রেন্থ ট্রেনিং ও পর্যাপ্ত হাইড্রেশন
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ডায়েটের পাশাপাশি সঠিক ধরনের শরীরচর্চা পেশি ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ব্যায়ামের ধরন: চর্বি কমানোর পাশাপাশি পেশি বাড়াতে স্ট্রেন্থ ট্রেনিং (Strength Training) বা শক্তি প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেন্থ ট্রেনিং শুধু পেশি ধরে রাখতে সাহায্য করে না, এটি দীর্ঘমেয়াদে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়। নিরাপদ বার্ধক্যের জন্য মাংসপেশি অপরিহার্য।

জলের ভূমিকা: বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রায় ৭০ শতাংশ মাংসপেশি জল দিয়ে গঠিত। পেশিকে সঠিকভাবে সচল রাখতে পর্যাপ্ত জল পান করা জরুরি। প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৩০ থেকে ৪০ মিলিলিটার জল পান করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত হাইড্রেশন শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে এবং পেশি গঠনে সহায়তা করে।

৩. মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা
ওজন কমানোর সময় মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমানোর যাত্রা যেন বাড়তি মানসিক চাপ সৃষ্টি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।

পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম অবশ্যই প্রয়োজন। ঠিকমতো না ঘুমালে পেশি বিশ্রাম পাবে না, ওজন কমা বাধাগ্রস্ত হবে এবং স্ট্রেস হরমোন বেড়ে গিয়ে ফ্যাট বার্নে বাধা দেবে।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস, উপযুক্ত ব্যায়াম এবং মানসিক সুস্থতার মাধ্যমেই কেবল পেশি না হারিয়ে স্বাস্থ্যকর উপায়ে অতিরিক্ত চর্বি কমানো সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy