আপনার অসুস্থতার জন্য কি ইনফ্লামেশন দায়ী? ৭ লক্ষণ জেনেনিন এক্ষুনি

সম্প্রতি ইনফ্লামেশন সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে, এটি ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ হলো শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যা সংক্রমণ, আঘাত বা বিষাক্ত পদার্থের মতো ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করে। তবে যখন প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে তখন এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ এবং আরও অনেক কিছু সহ বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী ইনফ্লামেশন নিয়ে বেঁচে থাকেন এমনকি তা বুঝতে না পেরেও। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইনফ্লামেশন বা প্রদাহের লক্ষণ-

১. বিভ্রান্তি

আপনি কি ভুলে যাওয়া, বিভ্রান্তি বা মনোযোগ দিতে অসুবিধা হচ্ছে? এটি যে কেবল চাপ বা ঘুমের অভাবে হয়, এমন নয়। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে, যার ফলে মানসিক অলসতা এবং ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এই ঘটনাটিকে সাধারণত ব্রেন ফগ বলা হয়। এটি দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করা বা দক্ষতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

২. বারবার ত্বকের সমস্যা

ব্রণ, একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্ত্রের দুর্বল স্বাস্থ্য বা প্রদাহজনক খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়। যদি আপনার ত্বক ক্রমাগত প্রদাহিত হয় বা ব্রেকআউটের ঝুঁকিতে থাকে বলে মনে হয়, তবে এটি হজম বা খাদ্য সংবেদনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। প্রদাহ ত্বকের নিরাময়ের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে ক্রমাগত জ্বালা এবং অস্বস্তি হতে পারে।

৩. ফোলাভাব

যদি হাত, মুখ কিংবা পায়ের চারপাশে ফোলাভাব লক্ষ্য করেন, তবে এটি জল ধরে রাখার ফলে প্রদাহের কারণে হতে পারে। শরীরের প্রদাহ স্বাভাবিক তরল ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে এই ধরণের ফোলাভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে, এটি অন্তর্নিহিত প্রদাহজনক সমস্যার সম্ভাব্য লক্ষণ।

৪. সর্ব সময় ক্লান্ত

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ শক্তির স্তরকে ধ্বংস করতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও ক্রমাগত ক্লান্ত এবং অবসন্ন বোধ করতে পারেন। প্রদাহ শরীরের বিশ্রাম এবং সঠিকভাবে সেরে ওঠার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে ক্রমাগত ক্লান্তি দেখা দেয়। যদি বেশিরভাগ সময় নিজেকে ক্লান্তি এবং অলসতা বোধ করেন, তবে এটি শরীরে প্রদাহজনক প্রক্রিয়ার কারণে হতে পারে।

৫. ওজনের পরিবর্তন

আপনি কি হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস লক্ষ্য করেছেন যা খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামের কারণে হয়নি? প্রদাহ বিপাককে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে শরীরের ওজনে ওঠানামা হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হরমোন এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের মতো প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে শরীরের জন্য সুস্থ ওজন বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

৬. মেজাজের পরিবর্তন

মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মস্তিষ্কের রসায়ন এবং হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তন করে প্রদাহ মেজাজের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে মেজাজের পরিবর্তন, খিটখিটে ভাব এবং এমনকী বিষণ্ণতাও হতে পারে। শরীরে প্রদাহজনক চিহ্নগুলো কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণকে ট্রিগার করে বলে প্রমাণিত হয়েছে, যা মেজাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৭. অন্ত্রের সমস্যা

যদি ঘন ঘন পেট ফাঁপা, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা অনিয়মিত মলত্যাগের সমস্যা হয়, তাহলে পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ এর জন্য দায়ী হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ অন্ত্রের পুষ্টি শোষণের ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে হজমে অস্বস্তি হতে পারে। এর ফলে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) বা এমনকী লিকিও গিট সিনড্রোমের মতো অবস্থা দেখা দিতে পারে। অন্ত্রে প্রদাহের ফলে পুষ্টির শোষণও কমে যায়, যে কারণে দেখা দেয় ক্লান্তি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy