বাবার গুলিতে টেনিস খেলোয়াড় মেয়ের মৃত্যু, নেপথ্যে অ্যাকাডেমি নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য?

দাম্পত্য বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে খুনের মতো ঘটনার খবর যখন দেশজুড়ে শিরোনামে, ঠিক তখনই এক ভিন্ন এবং মর্মান্তিক খবর যেন পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিল – বাবার গুলিতে প্রাণ হারালেন নিজেরই মেয়ে। ২৫ বছর বয়সী উঠতি টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবকে তাঁর বাবা দীপক যাদবই তিনটি গুলি করে হত্যা করেছেন, মামলার প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ভয়াবহ ঘটনা ও গ্রেফতারি
বৃহস্পতিবার গুরুগ্রামের সেক্টর-৫৭-এর সুশান্ত লোক ফেজ-২-এর নিজ বাড়িতে এই নির্মম ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরই ৪৯ বছর বয়সী দীপক যাদবকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তিনি নিজের অপরাধ স্বীকারও করেছেন। গুরুগ্রাম পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, সকাল সাড়ে দশ’টা নাগাদ দীপক যাদব তাঁর নিজের লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে রাধিকাকে গুলি করেন।

টেনিস অ্যাকাডেমি নিয়ে বিবাদ: প্রাথমিক অনুমান
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দীপক যাদব তাঁর মেয়ের টেনিস অ্যাকাডেমি পরিচালনা নিয়ে প্রচণ্ড বিরক্ত ছিলেন। এএসআই সন্দীপ সংবাদ সংস্থাকে জানান, রাধিকা বাবার বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজের টেনিস অ্যাকাডেমি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিযুক্ত দীপক যাদবের ভাই কুলদীপ, যিনি বাড়ির নীচের তলায় থাকেন, তিনি এই মামলায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খেলোয়াড়ের বাড়ির একতলায় টেনিস অ্যাকাডেমি চালিয়ে যাওয়া নিয়ে বাবা-মেয়ের মধ্যে তীব্র তর্কবিতর্ক লেগেই থাকত। কারণ, দীপক যাদব নিজের ব্যয় নির্বাহের জন্য ভাড়ার আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন এবং সম্ভবত মেয়ের অ্যাকাডেমি তাঁর সেই আয়ে বাধা সৃষ্টি করছিল। পুলিশের ভাষ্যমতে, একটি উত্তপ্ত তর্কের মাঝখানেই বাবা তাঁর লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বের করে মেয়েকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। রাধিকা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং পরিবারের সদস্যরা তাঁকে গুরুতর অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু সেখানে তিনি মারা যান।

তদন্তের গভীরে পুলিশ: অন্য কোনো উদ্দেশ্য?
গুরুগ্রাম পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং তা ব্যালিস্টিক ও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেক্টর-৫৬ থানার স্টেশন হাউস অফিসার রাজেন্দ্র কুমার সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাদের ফৌজদারি মামলা সম্পর্কে অবহিত করে, যখন গুলিবিদ্ধ রাধিকাকে জরুরি বিভাগে আনা হয়।

তবে, হত্যাকাণ্ডের পিছনে কেবল টেনিস অ্যাকাডেমি সংক্রান্ত বিবাদই একমাত্র কারণ কিনা, তা নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হত্যার পিছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সে কারণে, পুলিশ রাধিকার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এবং মৃতার বাবার বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ কী, তা জানতে পুলিশ এখন আরও গভীর তদন্তে নেমেছে। পুরো গুরুগ্রাম জুড়ে এই ঘটনা শোক ও স্তম্ভন তৈরি করেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy