অরেঞ্জ ক্যাপ জয়ী সাই সুদর্শনের নতুন লক্ষ্য, ইংল্যান্ডে লাল বলের চ্যালেঞ্জ

২০২৫ সালের আইপিএলে ব্যাট হাতে তরুণ বাঁ-হাতি ব্যাটার সাই সুদর্শন আলো ছড়িয়েছেন। গুজরাট টাইটান্সের হয়ে ১৫ ইনিংসে তিনি করেছেন ৭৫৯ রান, যা তাঁকে এনে দিয়েছে এবারের আইপিএলের অরেঞ্জ ক্যাপ। ব্যক্তিগত এই সাফল্যে সুদর্শন স্বভাবতই খুশি, কিন্তু দল শেষ পর্যন্ত শিরোপা দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ায় তাঁর মনে রয়ে গেছে একরাশ আক্ষেপ। তবে এখন তাঁর লক্ষ্য ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলের হয়েও এই সাফল্য ধরে রাখা।

মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে এলিমিনেটর ম্যাচে গুজরাট হারলেও, সুদর্শনের ব্যাটে ছিল স্বপ্নিল এক ইনিংস, ৪৯ বলে ৮০ রান। ইনিংস শেষে তিনি জানিয়েছিলেন, “এটা ঠিক যে, পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে রান করেছি। কিন্তু দল যদি চ্যাম্পিয়ন হতো, তাহলে আনন্দটা দ্বিগুণ হতো। কিছুটা তো আপশোস থাকছেই।”

জাতীয় দলে সুযোগ ও কাউন্টি অভিজ্ঞতার গুরুত্ব
আইপিএলের মঞ্চে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের পুরস্কার তিনি পেয়েছেন ভারতীয় জাতীয় দলে ডাক পেয়ে। আসন্ন ইংল্যান্ড সফরের টেস্ট স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন সাই সুদর্শন। দীর্ঘদিন ধরে লাল বলের ক্রিকেটে নজর কাড়ার পর এবার জাতীয় দলের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করার পালা।

সুদর্শন বলেন, “আইপিএলের ফর্ম দেশের হয়েও ধরে রাখতে হবে। গত কয়েকটি সিজনে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা আমার ব্যাটিংয়ে বড় পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে টেকনিকের দিক থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগবে ইংল্যান্ড সফরে।”

লাল বলের চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি
যদিও আইপিএলের মতো সাদা বলের ক্রিকেট খেলে সরাসরি লাল বলের ক্রিকেটে ফিরলে মানিয়ে নিতে খানিকটা সময় লাগে, সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন সুদর্শন। তাঁর কথায়, “টেস্ট সিরিজে নামার আগে সাদা বলের ধারাবাহিক খেলার প্রভাব কাটিয়ে ওঠাটা জরুরি। তা না হলে টেস্টে সমস্যায় পড়তে পারি। তবে প্রথম টেস্টের আগে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, তার মধ্যে নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে তুলতে পারব।”

বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৬ জুন ইংল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দেবে ভারতীয় দল। এই প্রসঙ্গে সুদর্শনের প্রতিক্রিয়া, “মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম, আইপিএল ফাইনালের পর ৪ জুন ইংল্যান্ডে যাব। এখন শুনছি ৬ তারিখ রওনা হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী যেটা ঠিক হবে, আমি সেটার জন্য প্রস্তুত। যত আগে পৌঁছনো যাবে, ততই মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে।”

টি-২০ নিয়ে জল্পনা ও ভবিষ্যতের ভাবনা
অন্যদিকে, আইপিএলে তাঁর পারফরম্যান্স অনেককে ভাবাচ্ছে—সুদর্শন কি ভারতের টি-২০ দলেও সুযোগ পাবেন? যদিও এই প্রসঙ্গে এখনই কোনও জল্পনায় যেতে নারাজ তিনি। তাঁর জবাব, “দেশের হয়ে খেলাটা প্রত্যেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন। তবে আমি খুব বেশি দূর ভাবছি না। আপাতত পুরো মনোযোগ ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে। তবে এটুকু বলব, টি-২০ ফরম্যাটে এখনও অনেক জায়গায় উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।”

আইপিএলের এবারের আসরে গুজরাট টাইটান্স শেষমেশ শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে গেলেও, সুদর্শনের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর ইনিংসগুলো ছিল টেকনিক ও ধৈর্যের মিশেল, যেখানে স্ট্রোক প্লে ও পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার দক্ষতা বারবার উঠে এসেছে। এই ধারাবাহিকতা যদি জাতীয় দলের জার্সিতেও বজায় রাখতে পারেন, তবে নিঃসন্দেহে ভারত পাবে ভবিষ্যতের এক নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।

ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের অন্যতম সম্ভাবনা হিসেবে সাই সুদর্শন যে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন, তাতে আর কোনও সন্দেহ নেই। আইপিএলের পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে টেস্ট দলের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখার মানসিকতা—সব মিলিয়ে এক পরিণত ক্রিকেটারের ছাপ রেখেছেন তিনি। এখন শুধু অপেক্ষা, ইংল্যান্ডের মাটিতে জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর নতুন অধ্যায় শুরু হওয়ার।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy