হাইকোর্টের নির্দেশে অযোগ্যদের প্রবেশে লাগাম, কীভাবে তাঁদের আবেদন আটকাবে SSC?

নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে বারবার কাঠগড়ায় দাঁড়ানো স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) এবার কলকাতা হাইকোর্টের এক স্পষ্ট নির্দেশের মুখে পড়েছে। আদালত জানিয়ে দিয়েছে, পূর্বে চিহ্নিত অযোগ্য প্রার্থীদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। এমনকি, অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও যারা ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন, তাদের আবেদনও বাতিল করতে হবে। হাইকোর্টের এই কঠোর অবস্থান নিঃসন্দেহে স্বাগত জানানোর মতো, কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে – দাগী আবেদনকারীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের আবেদন আটকানো কি এসএসসির পক্ষে আদৌ সম্ভব?

এসএসসি সূত্রের খবর, হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের সামনে বেশ কিছু ব্যবহারিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বর্তমানে, ‘দাগী’ আবেদনকারীদের এখনই আটকানোর কোনো সরাসরি উপায় কমিশনের কাছে নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এসএসসি যে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, সেই অনুযায়ী এসএসসির পোর্টালে যোগ্যতা সম্পন্ন যে কেউই আবেদন করতে পারবেন। সূত্রের দাবি, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময়ই অযোগ্যদের আবেদন বন্ধ করার মতো কোনো প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা এসএসসির পোর্টালে নেই।

এসএসসি-র কাছে চিহ্নিত যোগ্য প্রার্থীদের একটি তালিকা রয়েছে। ফলে, আবেদন করার সময় প্রার্থীরা যদি সঠিক নাম ও রোল নম্বর দেন, তাহলে তারা ১০ নম্বরের গ্রেস মার্কের জন্য বিবেচিত হবেন। এখনো পর্যন্ত এসএসসির কাছে মোট সাড়ে ৩ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে মাত্র কয়েকশো যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

এসএসসি জানিয়েছে, তারা চিহ্নিত অযোগ্যদের ঠিকই চিনতে পারবে, তবে সেটা আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর। আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে ভেরিফিকেশনের সময়ই ‘দাগী’দের ছেঁটে ফেলতে পারবে এসএসসি, তার আগে নয়। অর্থাৎ, প্রাথমিকভাবে যে কেউ আবেদন করতে পারলেও, চূড়ান্ত পর্যায়ে তাদের আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। এই পদ্ধতি কতটা নির্ভুল হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগে এসএসসি সওয়াল করেছিল যে, চিহ্নিত অযোগ্যদেরও নতুন নিয়োগে সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু যেহেতু তাদের পূর্ববর্তী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাই কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের নতুন করে কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। আদালতের এই অনড় অবস্থান নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত জরুরি।

তবে, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং পূর্বে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির নিরিখে, এসএসসির জন্য হাইকোর্টের এই নির্দেশ কার্যকর করা একটি বড় পরীক্ষা। অযোগ্যরা কিভাবে সিস্টেমের ফাঁক গলে আবেদন করছে, এবং কমিশন কিভাবে শতভাগ নির্ভুলভাবে তাদের বাদ দেবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। রাজ্যের যুবসমাজ এক স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অপেক্ষায়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy