সাধারণত যেকোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যবান ধাতু হিসেবে সোনাকে বিনিয়োগের জন্য বেশি নিরাপদ মনে করে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ সৌদি আরব এখন সোনার বদলে কেবল রুপো কিনছে। তাদের এই সিদ্ধান্ত অন্য দেশের জন্যও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেন রুপো এত গুরুত্বপূর্ণ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুপো এখন আর শুধু গয়না বা মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। এটি বর্তমানে প্রযুক্তির মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে। সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক গাড়ি, মোবাইল ফোন, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো আধুনিক প্রযুক্তি সবকিছুতেই রুপোর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। তাই বিশ্বজুড়ে এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
সৌদি আরব এই পদক্ষেপ নিয়েছে তাদের ভিশন ২০৩০-এর অংশ হিসেবে। তারা তেলের ওপর দেশের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা কমাতে চায় এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।
সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্তের কারণ কী?
১. অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য: সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে যে শুধুমাত্র তেলের ওপর নির্ভর করে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তারা তাদের অর্থনীতিকে বিভিন্ন খাতে ছড়িয়ে দিতে চায়, যার মধ্যে প্রযুক্তি অন্যতম। রুপো হলো এই নতুন প্রযুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
২. প্রযুক্তিগত চাহিদা: সৌদি আরব বর্তমানে কিছু মেগা প্রকল্প, যেমন: NEOM এবং গিগা সোলার ফার্ম নিয়ে কাজ করছে। এই প্রকল্পগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সৌরশক্তি ব্যবহার করা হবে। তাই তারা আগে থেকেই প্রচুর পরিমাণে রুপো কিনে রাখছে, যাতে ভবিষ্যতে তাদের এই প্রযুক্তিগত চাহিদা মেটানো সহজ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দশকের শেষে সবুজ প্রযুক্তিতে রুপোর ব্যবহার ৩০%-এর বেশি হবে।
৩. ভূ-রাজনৈতিক কৌশল: ব্রিকস+ জোটে যোগ দেওয়ার পর সৌদি আরব মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে। রুপো এমন একটি সম্পদ যা কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় সহজে প্রভাবিত হয় না এবং বিশ্বজুড়ে এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তা
সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ বাকি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য একটি বার্তা। এটি প্রমাণ করে যে শুধু সোনার ওপর আস্থা রাখলে হবে না, ভবিষ্যতের অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় ধাতুগুলোতেও বিনিয়োগ করা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুপোকে এখন ‘বৃদ্ধির ইঞ্জিন’ হিসেবে ধরা হয়। কারণ প্রযুক্তি এবং নতুন শিল্পে এর ব্যবহার বাড়ছে। তাই অস্থির বাজারে সোনাকে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও, রুপোকে এখন দীর্ঘমেয়াদি লাভের জন্য ‘ইঞ্জিন’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২৫ সালে রুপো ৪০%-এরও বেশি লাভ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিচ্ছেন যে স্থিতিশীলতার জন্য পোর্টফোলিওতে ৮% সোনা এবং বৃদ্ধির জন্য ১৫% রুপো রাখা যেতে পারে।
এতে যদি কোনো কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তবে নির্দ্বিধায় আমাকে জানাতে পারেন।