কলেজ ফেস্টের মঞ্চে ‘মদের গ্লাস’ মাথায় নিয়ে স্বল্পবসনা এক মহিলার সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র নেতার বেলি ড্যান্সের দৃশ্য ভাইরাল হতেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে। ঘটনাটি ঘটেছে বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজে, যেখানে কামারহাটির তৃণমূল ছাত্র নেতা রানা বিশ্বাসের এই ‘কীর্তি’ দেখে স্তম্ভিত অনেকেই।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং ছবিতে দেখা যাচ্ছে, চটুল হিন্দি গানের তালে রানা বিশ্বাস মাথায় একটি কাঁচের গ্লাস নিয়ে এক মহিলার সঙ্গে বেলি ড্যান্সে মত্ত। মহিলাটির পোশাক ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত। দৃশ্যটি এতটাই অস্বাভাবিক যে, প্রথম দেখায় যে কেউই এটিকে কোনো নাইট ক্লাব বা বারের পার্টির ছবি বলে ভুল করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটি বেলঘরিয়া ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের বার্ষিক উৎসবে ধারণ করা দৃশ্য।
এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে এমন অশালীন নৃত্যের আয়োজন এবং তাতে একজন ছাত্র নেতার অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তৃণমূলের ‘লঘু’ প্রতিক্রিয়া, বিরোধীদের ‘দাবি’
কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা অবশ্য ঘটনাটিকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “এইরকম একটু নাচ-গান হয়েই। নাচ সবাই পছন্দ করে এবং মজা পায়। আর এতেই আপত্তি জানিয়েছে বিরোধীরা।” তাঁর এই মন্তব্য বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে ময়দানে নেমেছে বিজেপি। প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল রাজ্যের কলেজগুলোকে বার বানিয়ে দিয়েছে। দিদিমণির অনুপ্রেরণায় কলেজগুলোতে কালচার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই কোনো কলেজে মনোজিত, কোনো কলেজে রানা বিশ্বাস, আবার আরজি কর হাসপাতালে সন্দীপ ঘোষদের বাড়-বাড়ন্ত হয়ে গেছে। তাই রানা বিশ্বাসরা মাথায় মদের গ্লাস নিয়ে কলেজের ফেস্টে বেলি ড্যান্স করছে। শিক্ষাঙ্গন অধঃপতনে যাচ্ছে।” অর্জুন সিংয়ের মন্তব্যে শিক্ষাঙ্গনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কার্যকলাপ নিয়ে বিজেপির ক্ষোভ স্পষ্ট।
ছাত্র নেতার অদ্ভুত সাফাই
এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা রানা বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া আরও বিস্ময়কর। ফোন মারফত যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ওটা মদের গ্লাস সেটা কে বলল? জামাল কুদু নাচে যদি আমি অপরাধ করে থাকি তাহলে ববি দেওয়ালও অপরাধ করেছে। তার আগে জেল হওয়া উচিত।” রানা বিশ্বাসের এই ‘জামাল কুদু’ নাচের প্রসঙ্গ টেনে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা আরও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তিনি নিজের কাজে কোনো ভুল দেখতে পাচ্ছেন না, বরং বিষয়টিকে একটি সাধারণ নাচের অংশ হিসেবেই দেখছেন।
এই ঘটনা আবারও রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনগুলিতে সুস্থ পরিবেশ ও সংস্কৃতির অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। একটি কলেজ ফেস্টের নামে এমন অশালীন কার্যকলাপ কীভাবে অনুমোদিত হলো এবং একজন ছাত্র নেতা কিভাবে তাতে যুক্ত হলেন, তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। শিক্ষামন্ত্রক এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।