রেললাইনের ওপর যমদূত হয়ে ধেয়ে আসছিল বনগাঁ লোকাল। আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড, তারপরেই ঘটে যেত মারাত্মক বিপর্যয়। ঠিক সেই মুহূর্তেই দেবদূতের মতো আবির্ভূত হলেন রেলের পয়েন্টসম্যান সৌমেন গাঙ্গুলি। নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে লাইনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক বৃদ্ধা যাত্রীকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে টেনে আনলেন তিনি। গত ১৮ ডিসেম্বর শিয়ালদহ ডিভিশনের বীরা স্টেশনে ঘটে যাওয়া এই শিউরে ওঠা ঘটনার পর আজ তাঁকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করল রেল কর্তৃপক্ষ।
ঠিক কী ঘটেছিল সেই সকালে? ১৮ ডিসেম্বর সকালবেলা বীরা স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকছিল ৩৩৩৬৫ বারাসত-বনগাঁ লোকাল। ঠিক সেই সময় এক বৃদ্ধা যাত্রী অসাবধানতাবশত রেললাইন পার হচ্ছিলেন। ট্রেনের আওয়াজ বা গতি বুঝতে না পেরে তিনি সরাসরি লাইনের ওপর চলে আসেন। ট্রেন তখন প্ল্যাটফর্মের খুব কাছে। স্টেশনে উপস্থিত যাত্রীরা যখন আতঙ্কে চিৎকার করছেন, তখনই কর্তব্যরত পয়েন্টসম্যান শ্রী সৌমেন গাঙ্গুলি বিদ্যুৎবেগে দৌড়ে গিয়ে লাইনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ট্রেনটি ওই স্থান অতিক্রম করার ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে তিনি বৃদ্ধাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনেন।
রেল কর্তৃপক্ষের কৃতজ্ঞতা ও সম্মান: এই অসামান্য সাহসিকতার জন্য বৃদ্ধা যাত্রী রেল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত প্রশংসাপত্র জমা দিয়েছেন। সেখানে তিনি সৌমেনবাবুকে তাঁর ‘দ্বিতীয় জীবন’ দাতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই খবর পৌঁছাতেই শিয়ালদহ বিভাগের ডিআরএম (DRM) শ্রী রাজীব সাক্সেনা সৌমেন গাঙ্গুলিকে ডেকে পাঠান এবং তাঁর হাতে সাহসিকতা পুরস্কার তুলে দেন। ডিআরএম বলেন, “সৌমেনবাবুর এই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দায়িত্ববোধ ভারতীয় রেলের গর্ব।”
সতর্কবার্তা: শিয়ালদহ ডিভিশনের পক্ষ থেকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রীদের বারবার ফুট ওভার ব্রিজ (FOB) ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। রেলের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, সোদপুরের মতো স্টেশনেও অতীতে গেট এবং লাইনে অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সৌমেন গাঙ্গুলির এই বীরত্ব যেমন প্রশংসিত হচ্ছে, তেমনই সাধারণ মানুষকে রেললাইন পারাপার করার ঝুঁকি সম্পর্কে আবারও সতর্ক করা হয়েছে।