“রক্ত আর বাণিজ্য একসঙ্গে চলতে পারে না” – এই নীতি অবলম্বন করে আফগানিস্তানের সঙ্গে ‘ট্রেড ওয়ার’-এর ডাক দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্ত কয়েক দিনের মধ্যেই ইসলামাবাদের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বন্ধের ফলে পাকিস্তানের অর্থনীতিতে চরম সংকট দেখা দিয়েছে, যার জেরে দেশের অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। কার্যত, আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে চোখের জলে নাকের জলে হয়েছে পাকিস্তান।
১১ অক্টোবর থেকে যখনই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ হয়, তখনই তালিবান সরকার দ্রুত ইরান ও ভারতের মতো দেশগুলি থেকে পণ্য সামগ্রী আমদানি শুরু করে। কিন্তু এর ফলে বড়সড় বেকায়দায় পড়েছে পাকিস্তান, যার অর্থনীতির হাল এমনিতেই বেহাল। ইসলামাবাদের এই হঠকারি সিদ্ধান্তে মাথায় হাত পড়েছে পাক ব্যবসায়ীদের।
ডন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানের ব্যবসা, আমদানি ও রফতানি খাত ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার জেরে পাক ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া’র ব্যবসায়ীরা এখনই বর্ডার খোলার দাবি শুরু করেছেন।
ভয়াবহ প্রভাব সিমেন্ট ও ওষুধ শিল্পে:
পাক সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিজেদের জন্যই বুমেরাং প্রমাণিত হচ্ছে। শুধু যে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়, বাজারে বেড়ে গিয়েছে একাধিক জিনিসের দাম।
-
কয়লা সংকট: আফগানিস্তানের কাবুল থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ হওয়ায় পাক ব্যবসায়ীদের দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, মুজাম্বিকের মতো দেশ থেকে অনেক বেশি দামে কয়লা কিনতে হচ্ছে। যার জেরে পাকিস্তানে প্রতি টন কয়লার দাম ৩০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৪৫ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। সিমেন্ট শিল্পে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে।
-
ওষুধ শিল্পে বিপর্যয়: মেডিক্যাল সেক্টরেও একই অবস্থা। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি আফগানিস্তানকে কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের ওষুধ সরবরাহ করত। কিন্তু বর্ডার বন্ধ হওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণে ওষুধ গুদামেই পড়ে রয়েছে। এমনকি সেই ওষুধগুলি দেশে বিক্রির জন্য স্বীকৃত না হওয়ায় পাকিস্তানেও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে মহা ফাঁপরে পড়েছে পাক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি।
এছাড়াও, সবজি ও ফলের বিশাল চালান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, সময়মতো রফতানি না হওয়ায় প্রচুর সামগ্রী পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও নেটিজেনরা এই সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে তীব্র সমালোচনা করছেন।
যদিও খাইবার পাখতুনখোওয়ার পাঠানরা এখনই বর্ডার খোলার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, কিন্তু ‘বিপদে বুদ্ধিনাশ’ অবস্থা হয়েছে ইসলামাবাদের। যার ফলে হাড়ে হাড়ে টের পেতে হচ্ছে আম পাকিস্তানি জনগনকে।