মহাকাশে ১৪ দিনের ঐতিহাসিক অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করে এবার ফেরার পালা ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা এবং তাঁর অ্যাক্সিয়ম-৪ দলের। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) থেকে আগামী ১৪ জুলাই, রবিবার, ক্রু ড্রাগন গ্রেস মহাকাশযানে তাঁদের ফিরতি যাত্রা শুরু হতে চলেছে বলে নাসা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আবহাওয়া এবং সকল পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে এই তারিখেই মহাকাশযানটির ‘আনডকিং’ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
গত ২৬ জুন, অ্যাক্সিয়ম-৪ টিমের চার সদস্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছেছিলেন। এর পর থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁদের নিবিড় গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। নির্ধারিত ১৪ দিনের মিশন মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখন পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রস্তুতি চলছে। নাসার তরফে জানানো হয়েছে, সঠিক সময়সূচি সরকারিভাবে দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হবে।
মহাকাশে ৬০টি সফল পরীক্ষা, বীজের গবেষণায় শুভাংশুর অবদান
অ্যাক্সিয়ম-৪ টিম তাদের মহাকাশ মিশনে মোট ৬০টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে, যা মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এই দলটি এখনো পর্যন্ত ২৩০ বারেরও বেশি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ফেলেছে।
এই মিশনে ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লার ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি ভারত থেকে আনা বীজ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে অনেকটা সময় ব্যয় করেছেন। ‘স্প্রাউটস পরীক্ষা’-এর অংশ হিসেবে মহাকাশে অঙ্কুরিত বীজগুলিকে তিনি ফ্রিজারে সংরক্ষণ করেছেন, যা পৃথিবীর মাটিতে ফিরে আসার পর বিস্তারিত বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হবে। এছাড়া, কেরালা থেকে আনা ৬ ধরণের বীজের পর্যবেক্ষণ এবং ছবি তোলার কাজও তিনি নিবিড়ভাবে চালিয়েছেন। মাইক্রো অ্যালগির বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণও অব্যাহত ছিল তাঁর গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাটানো এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অ্যাক্সিয়ম স্পেসের প্রধান বিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলেছেন শুভাংশু। তিনি স্টেম সেল গবেষণা থেকে শুরু করে গাছপালার বৃদ্ধি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত বলে জানিয়েছেন। তাঁর এই গবেষণাগুলি মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদী মানব বসতি স্থাপন এবং নতুন প্রযুক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পরবর্তী পূর্ণকালীন মিশন ‘ক্রু ১১’-এর উৎক্ষেপণ আগামী ৩১ জুলাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা মহাকাশ গবেষণায় মানবজাতির নিরন্তর অগ্রগতিরই ইঙ্গিতবাহী।
শুভাংশু শুক্লার এই সফল মহাকাশ অভিযান ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে রয়েছে গোটা দেশ।