ভাঙড়ে ফের রক্তের রাজনীতি! তৃণমূল নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন, আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নচিহ্ন

ভর সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে গুলি ও কোপে তৃণমূল নেতা রজ্জাক খাঁ-এর নৃশংস হত্যাকাণ্ড আবারও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের রাজনৈতিক হিংসার দীর্ঘস্থায়ী চিত্রকে সামনে এনেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলীয় কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটে, যা কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং রাজনৈতিক সংঘাতের গভীরতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

ঘটনার বিবরণ ও নেপথ্যের সংযোগ:

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রজ্জাক খাঁ, যিনি তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি এবং ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ার পরও দুষ্কৃতীরা ক্ষান্ত হয়নি; ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাঁকে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়, যার ফলস্বরূপ ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই পৈশাচিক ঘটনা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই দু’জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে এবং দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

রাজনৈতিক দোষারোপ ও অস্বীকার:

এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই তৃণমূলের অভিযোগের আঙুল সরাসরি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF)-এর দিকে। বিধায়ক শওকত মোল্লা কড়া ভাষায় বলেছেন, “ISF আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই কাজ করেছে। এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্যই পরিকল্পিত খুন। রজ্জাক দুপুরে আমাদের একটি বৈঠকে ছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথেই তাঁকে মেরে ফেলা হল। আর এইসবের নেপথ্যে রয়েছেন নওশাদ সিদ্দিকি। পুলিশের কাছে দাবি, দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”

তবে, ISF এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। পাল্টা অভিযোগ এনে তারা দাবি করেছে, “এটি সম্পূর্ণভাবে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। নিজেদের দলের নেতাকেই নিজেরা খুন করে এখন আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।” এই ধরনের পারস্পরিক দোষারোপ রাজনৈতিক হত্যার ঘটনাগুলোকে আরও জটিল করে তোলে এবং আসল সত্য উদঘাটনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

ভাঙড়: রাজনৈতিক সংঘর্ষের বারবারন্ত কেন্দ্র:

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভাঙড় দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক মাটির নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য মরিয়া, যার ফলস্বরূপ প্রায়শই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। রজ্জাক খাঁ-এর হত্যাকাণ্ড এই প্রবণতারই এক নতুন সংযোজন।

উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই বসিরহাটে প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে ঘন জনবহুল বাজারের মাঝে প্রকাশ্যে গুলি করে কুপিয়ে খুন করা হয় ২৪ বছর বয়সী তৃণমূল কর্মী আনার হোসেন গাজিকে। বাইকে বসে চা খাওয়ার সময় তাঁকে টার্গেট করে তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ার পর ধারাল অস্ত্র দিয়েও কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন:

বারবার এভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিশানা করে প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। রাজনৈতিক সংঘাত যেভাবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং প্রকাশ্য দিবালোকে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটছে, তা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করে না, বরং রাজ্যের সাধারণ মানুষের মনেও এক ধরনের ভীতির পরিবেশ তৈরি করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্রুত, নিরপেক্ষ এবং কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া ভাঙড়ের মতো অঞ্চলগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy