সিলিকন ভ্যালির ছোঁয়া কি এবার বাংলার মাটিতে? সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ভারতকে আত্মনির্ভর করার লক্ষ্যে কেন্দ্রের যে বৃহৎ পরিকল্পনা, তার অংশীদার হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গও। বুধবার কলকাতায় মার্কিন কনসাল জেনারেল ক্যাথি গিলেসের সঙ্গে এক ফলপ্রসূ বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেমিকন্ডাক্টর কারখানা নির্মাণে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এই বৈঠককে ঘিরে রাজ্যের শিল্পমহলে নতুন করে আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছে।
বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বৈঠকের একাধিক ছবি শেয়ার করে এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কথা জানান। তাঁর পোস্ট অনুযায়ী, রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন হতে চলেছে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন।
মুখ্যমন্ত্রীর সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা: ‘শিল্প ও শিক্ষার মেলবন্ধন’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পোস্টে লেখেন, “সল্টলেক সেক্টর ফাইভে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক অফ ইন্ডিয়াতে (STPI) প্রায় ১৩ হাজার বর্গফুট জায়গা একটি মার্কিন সংস্থাকে (গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ়) দেওয়া হয়েছে। তারা আরও ১৯ হাজার বর্গফুট জায়গা চেয়েছে। সে প্রক্রিয়া চলছে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমেই তিনি ইঙ্গিত দেন যে, রাজ্য সরকার শিল্প এবং শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে কতটা সচেষ্ট।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের সরকার শিল্প, শিক্ষাক্ষেত্র, বিদ্যুৎ শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে। পড়ুয়াদের উন্নতির কথা ভেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নানা যৌথ প্রকল্পে ইন্টার্নশিপের কথা ভাবা হচ্ছে। নিউ জার্সির একটি সংস্থা কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর এবং ন্যানোইলেকট্রনিক্স প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, শুধু বিনিয়োগ আকর্ষণ নয়, রাজ্যের তরুণ প্রজন্মকেও এই শিল্পে যুক্ত করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে।
‘গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ়’-এর আগমন: ‘ফ্যাব-লেস’ কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ ফ্যাব্রিকেশন?
বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী আরও বিস্তারিত তথ্য দেন। তিনি জানান, বিশ্ববিখ্যাত সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী সংস্থা ‘গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ়’ কলকাতায় তাদের ডিজাইন, টেস্টিং ইত্যাদির জন্য একটি ‘ফ্যাব-লেস’ কেন্দ্র গড়বে। এই ‘ফ্যাব-লেস’ কেন্দ্র তৈরির জন্য সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের STPI আইটি পার্কে ইতিমধ্যেই প্রায় ১৩ হাজার বর্গফুট জমি পেয়েছে সংস্থাটি। উল্লেখযোগ্যভাবে, তারা রাজ্য সরকারের কাছে আরও ১৯ হাজার বর্গফুট অতিরিক্ত জায়গার আবেদন করেছে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কাজ করছে বলে জানা গেছে। গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে এ রাজ্যে সেমিকন্ডাক্টর কারখানা নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকেও জানিয়েছিলেন যে, সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি কলকাতাকে বেছে নিচ্ছে।
‘গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ়’ স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং গাড়ির মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহৃত মাইক্রোচিপ তৈরির জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ডিজাইন ও টেস্টিং কেন্দ্র হলেও, সূত্র মারফত জানা গেছে, গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ় ভবিষ্যতে কলকাতায় পূর্ণাঙ্গ ফ্যাব্রিকেশন ক্ষেত্রেও তাদের কাজকে প্রসারিত করতে পারে। এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন রাজ্যে উচ্চপ্রযুক্তির কর্মসংস্থান তৈরি করবে, তেমনি ভারতকে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে দেবে। বাংলার শিল্প মানচিত্রে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।