এক টুকরো গুড় চাওয়ার ‘অপরাধে’ নিজের মাকেই মারধর করে দু’দিন ধরে ঘরে আটকে রাখার মতো এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটল মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানার অধীনস্থ আব্দুলপুর এলাকায়। অভিযোগের তির বৃদ্ধার নিজের ছেলে তোহিদুল মণ্ডলের দিকে। এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলল মানবিকতা ও পারিবারিক সম্পর্কের মূল্যবোধ নিয়ে।
অরুণা বেওয়া নামে এক বৃদ্ধার সামান্য গুড় খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছিল। তিনি নিজের বউমার কাছে একটু গুড় চেয়েছিলেন। আর এই সামান্য চাওয়াটাই তাঁর কপালে চরম দুর্ভোগ নিয়ে এল। বৃদ্ধা অরুণা বেওয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “রবিবার বউমার কাছে একটু গুড় চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার ছেলে হঠাৎ প্রচণ্ড রেগে গিয়ে চোখে, মুখে, নাকে কিল, চড়, ঘুষি মারতে থাকে। আমার মুখে গভীর কালশিটে পড়ে গিয়েছে, চোখেও ঝাপসা দেখছি।” তাঁর কথা শুনে উপস্থিত সকলের চোখ ভিজে আসে।
জমি হাতিয়ে নেওয়ার পর থেকেই অত্যাচার শুরু
অরুণা বেওয়া আরও জানান, এই অত্যাচার নতুন নয়। গত পৌষ মাসে তাঁর একমাত্র ছেলে তোহিদুল মণ্ডল জোর করে তাঁর সমস্ত জমি-জায়গা নিজের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নিয়েছে। তারপর থেকেই ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মায়ের উপর মারধর শুরু করে। কিন্তু এবারের ঘটনা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শুধু শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেই থেমে থাকেনি ছেলের অত্যাচার। ঘটনার পর থেকে টানা দু’দিন অরুণা বেওয়াকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। অসহায় বৃদ্ধা কোনওরকমে সেই বন্দিদশা থেকে পালিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
নাগরিক সহায়তা মেলেনি, পুলিশের দ্বারস্থ বৃদ্ধা
আত্মীয়ের বাড়িতে কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি ন্যায়বিচারের আশায় হরিহরপাড়া তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি অফিসে পৌঁছন এবং ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন। তবে সেখানেও তিনি কোনো সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ। শেষমেশ, আর কোনো উপায় না দেখে, তিনি হরিহরপাড়া থানার দ্বারস্থ হন।
এই ঘটনায় তোহিদুল মণ্ডলের বিরুদ্ধে হরিহরপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এই ঘটনা সমাজে বৃদ্ধাদের প্রতি অবহেলা ও অত্যাচারের এক ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরেছে। এক টুকরো গুড়ের জন্য মায়ের উপর এমন পাশবিক আক্রমণ, তাও নিজের ছেলের হাতে, সমাজের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে স্থানীয় মহল।