পাগড়িতে প্ল্যাকার্ড বিতর্কের অবসান, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্ষমা চাইলেন’ সুকান্ত মজুমদার

মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে নিজেরই শিখ দেহরক্ষীর পাগড়িতে প্ল্যাকার্ড লেগে যাওয়ার ঘটনায় অবশেষে ক্ষমা চাইলেন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডঃ সুকান্ত মজুমদার। এই ঘটনা গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল, যেখানে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি নেতার এই আচরণকে ‘অসম্মানজনক’ আখ্যা দিয়ে সরব হয়েছিল।

ঘটনার সূত্রপাত: কালীঘাটে উত্তেজনার মুহূর্ত
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ১২ জুন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় অশান্তির জেরে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পথিমধ্যে জিঞ্জিরা বাজারের কাছে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তিনি, যা থেকে শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ ও ধস্তাধস্তি। এরপর তিনি একটি ‘তুলসী মঞ্চ’ হাতে নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানেও পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়।

ঠিক সেই সময়, পুলিশ যখন সুকান্ত মজুমদারকে প্রিজন ভ্যানে তোলার চেষ্টা করছিল, তখন তার হাতে থাকা এক জোড়া স্যান্ডেলের একটি পোস্টার পুলিশের দিকে ছুঁড়তে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক শিখ দেহরক্ষীর মাথায় থাকা পবিত্র পাগড়িতে গিয়ে লাগে। এই দৃশ্য মুহূর্তে ক্যামেরাবন্দী হয়ে যায় এবং ভাইরাল হয়ে ওঠে।

তীব্র সমালোচনা ও অবশেষে ক্ষমা প্রার্থনা
এই ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ শুরু হয়। শাসক দল তৃণমূল এই ঘটনাকে ‘শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অসম্মান’ হিসেবে তুলে ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারে নামে। যদিও প্রথমে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন, তবে লাগাতার চাপ ও সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চাইলেন তিনি।

সুকান্ত মজুমদার তার পোস্টে লেখেন:

“গত ১২ জুন, কলকাতার কালীঘাটে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বাসভবনের সামনে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সময়, কলকাতা পুলিশ আমাকে-সহ বিজেপির অন্যান্য রাজ্য নেতৃবৃন্দ ও কার্যকর্তাদের আটক করে বলপূর্বক প্রিজন ভ্যানে তোলে। সেই সময় উত্তেজনার মুহূর্তে, পুলিশের উদ্দেশ্যে ছোড়া একটি প্ল্যাকার্ড দুর্ঘটনাবশত আমার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক শিখ ধর্মাবলম্বী সিআইএসএফ কর্মীর পবিত্র পাগড়ির উপর গিয়ে পড়ে।”

তিনি আরও লেখেন, “এই অনিচ্ছাকৃত ঘটনায় যদি কোনো শিখ ভাই বা বোনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগে থাকে তবে আমি বিনম্রভাবে তাঁদের কাছে আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি এবং ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি কার্যকর্তা শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস, পবিত্র পাগড়ির মর্যাদা এবং তাঁদের গৌরবময় ঐতিহ্যের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল।”

সুকান্ত মজুমদারের এই ক্ষমা প্রার্থনার পর রাজনৈতিক মহলে এই বিতর্কের অবসান হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এই ঘটনা নিশ্চিতভাবে রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy